Homeজেলাজুড়েনাটোরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর পাশে দাড়ালেন জেলা প্রশাসক

নাটোরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর পাশে দাড়ালেন জেলা প্রশাসক

নাটোর নিউজ: নাটোরে প্রতিবন্ধী মাহফুজুর রহমানের পাশে দাড়ালেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাটোর সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে এসএসসি পরীক্ষার্থী মাহফুজকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাদিম সারোয়ার, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার মোঃ সালাহ উদ্দীন আল ওয়াদুদ, বিটিভি’র সাংবাদিক জালাল উদ্দিন প্রমূখ।
পড়া-লেখার পাশাপাশি মাহফুজ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ডাস্টবিন তৈরি করে রীতিমতো সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবই সম্ভব। প্রতিবন্ধী হয়েও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে ডাস্টবিন তৈরি করে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে বিনামূল্যে স্থাপন করেছেন মাহফুজ।

নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার ঠাকুর ল²ীকোল গ্রামের একমাত্র ছেলে মাহফুজুর রহমান, পিতা রিকশাচালক সুজাদুর রহমান, মাতা গৃহিণী শাহনাজ বেগম। ৬ মাস বয়সে হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন মাহফুজুর। এরপর অসুস্থ হয়ে থাকা অবস্থায় ধীরে ধীরে দুই পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলে সে। লাঠিতে ভর করে চলাচল করতে হয় তার। তবু স্বপ্ন দেখেন পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার। তৈরিকৃত ডাস্টবিন দেখতে অনেকেই আসে তার বাড়িতে। জানা গেছে মাহফুজুর কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য। এছাড়াও তিনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য ছুটে বেড়ায় নাটোরের বিভিন্ন প্রান্তরে। যেখানেই যায় তার সাথে থাকে একটি করে ব্যাগ। রাস্তায় পড়ে থাকা চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের প্যাকেট, পলিথিন, ছেড়া জুতা ও ঔষধের খোসা পরিস্কার করে মাহফুজ। মাহফুজ বলেন, একদিন হঠাৎ চিন্তা করেন ফেলে দেওয়া বোতল দিয়ে কিছু তৈরি করতে হবে, যা মানুষের উপকারে আসবে। তারপর থেকেই বিভিন্ন এলাকার মানুষের ফেলে দেওয়া বোতল সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর তিনি দুই হাজার ৫০০ বোতল সংগ্রহ করেন। পর্যায়ক্রমে বোতলগুলো গুনার তার বাঁশের বাতা দিয়ে তৈরি করেন ডাস্টবিন। আর এইসব ডাস্টবিন বিভিন্ন হাটে বাজারে বিনামূল্যে স্থাপন করেছেন মাহফুজ ।

দারিদ্র পরিবারের মাঝে জন্ম তবুও মাহফুজের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে সে হুইল চেয়ারে বসে নাটোর সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে যায় । তার স্বপ্ন হলো লেখা-পড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। তার পিতা সুজাদুর রহমান রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অল্প উপার্জনের মধ্যে দিয়ে সংসার চলে অভাব-অনাটনে। শারীরিক অক্ষমতা ও দ্রারিদ্রতার কষাঘাতে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো মাহফুজকে।

এমন একটি নির্মম কাহিনী সাংবাদিকদের নজরে আসে। তার স্বপ্ন পূরণে সাংবাদিকদের লেখার মাধ্যমে সংবাদ সংগ্রহ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের নজরে পড়েন। তারই একান্ত প্রচেষ্টোয় এমন একজন প্রতিবন্ধীর লেখাপড়া ও উজ্জল ভবিষ্যত গড়ে তোলার লক্ষে আর্থিক সহযোগিতার ইচ্ছা পোষণ করেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় সোমবার বিটিভি’র সাংবাদিক জালাল উদ্দিন, সিনিয়র ফটো সাংবাদিক গোলাম গাউসের উপস্থিতিতে প্রতিবন্ধী মাহফুজকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়। প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্র মাহফুজ আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে হাস্যোজ্জল মুখে বলেন, আমি লেখা-পড়া শিখে আমি মানুষের মতো মানুষ হবো। আমাকে সহায়তা করায় সারাটি জীবন স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।

এ ব্যাপারে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও লেখা-পড়ার প্রতি অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকার বিষয়টি আমি জানতে পেরে প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্র মাহফুজকে সহযোগিতা প্রদান করতে পেরে নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি। আমি তার উজ্জল ভবিষ্যত গড়ার লক্ষে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments