“নস্টালজিয়া”
– তরুণ গাঙ্গুলী
প্রাকৃতিক নিয়মে বয়েস বাড়ার সাথেসাথে নাকি নস্টালজিয়াও বাড়তে থাকে। আস্তিক দার্শনিকরা বলেন বৃদ্ধবয়সে তোমার স্মৃতিপটে যে বয়সের কথা বারবার ঘুরেফিরে মনে আসবে, জানবে তোমার আয়ু ঠিক ততবছর বাকি আছে। আজ বিকেলে স্মৃতিমন্থন করতে গিয়ে আমার ৬/৭ বছর বয়সের একটি অভিজ্ঞতা মনে উঠে এল।
আমার দেশের বাড়িতে ৭/৮টা খেজুর গাছ ছিল।কার্তিকের শেষে আমাদের গাছি রাখালকাকু খেজুরগাছ কাটতে আসত। তখন আমাদের আনন্দ দ্যাখে কে। একএক গেলাস জিরেন কাটের মিস্টি রস পাটকাঠির নল দিয়ে সো সো করে টেনে খেতাম। প্রথমদিন রাখালকাকু গাছগুলোর পাতা ছেঁটে ধারালো হাঁসুই দিয়ে উপরের ত্বক চেছে ফেলত। খেজুরপাতাগুলো বাড়িতে নিয়ে শুকিয়ে শোয়াবসার পাটি তৈরী হত। তার দুদিন পরে এসে গাছি ঐ ক্ষতস্থানে হাঁসুই দিয়ে চোখ তৈরী করতো আর একটা নল বসিয়ে তার সাথে দড়ি দিয়ে একটি মাটির কলসী ঝুলিয়ে দেওয়া হোত। আমরা নিচে দাঁড়িয়ে চাতক পাখির মত দেখতাম কিকরে বিন্দুবিন্দু খেজুররস নল বেয়ে কলসীতে জমা হ’চ্ছে। আমাদের কাজ ছিল ১,২,৩ করে গোণা, কত অবধি গুণলে এক ফোঁটা রস গাছ থেকে গড়িয়ে ঐ কলসীতে পড়বে। যদি ৭/৮ গোণার মধ্যে এক ড্রপ পড়তো, বুঝতাম পরদিন সকালে কলসীটি রসে টুইটম্বুর হয়ে পড়বে।
আবার কোন কোন গাছে দেখতাম ৪/৫ না গুণতেই রস ঝরণার মত টুপটুপ করে আধারে ঝরে পড়ছে। বিস্ময়ে গাছিকাকুকে জিজ্ঞাসা করতাম, “কাকু এই গাছটা থেকে এত দ্রুত কেন রস গড়াচ্ছে?” কাকু বলতো, “এটা যে পুরুষগাছ, তাই একটু বলবান, গায়ে রক্তও বেশি।” শুনে আমি চমকে উঠেছিলাম, “কাকু, তবে কি আমরা খেজুর গাছের রক্ত ভুল করে রস ভেবে পান করি?”
এ কথার জবাব আমাকে কেউ কোনদিন দেয় নি।