হতাশা ও আত্মহত্যা প্রসঙ্গ – তসলিমা নাসরিন
কে ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে ভুগছে, যে কোনও সময় কে আত্মহত্যা করতে পারে, তা সাধারণ মানুষ বুঝবে না। কথা বললেও বুঝবে না, একসংগে কাটালেও বুঝবে না। মনোরোগ-বিজ্ঞানীরাই কথা বলে বুঝতে পারেন। যারা দুঃখ কষ্ট অভাব অনটনের কারণে হতাশায় ভোগে বা ডিপ্রেশানে ভোগে, বারবার বলে মরে যেতে ইচ্ছে করছে, তারা আত্মহত্যা করে না, তাদের ডিপ্রেশান স্বাভাবিক, নরমাল। ডিপ্রেশান আর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার এক নয়। প্রথমটি রোগ নয়, দ্বিতীয়টি রোগ। সুস্থ মানুষের ডিপ্রেশানের পেছনে কারণ থাকে,অসুস্থ মানুষের ডিপ্রেশানের সত্যিকার কোনও কারণ নেই, কারণ যদি থাকেই তা সাধারণত মনগড়া। আত্মহত্যার পেছনে মনোরোগীদের কোনও ভালো যুক্তি থাকে না, কখনও আদৌ কোনও যুক্তিই থাকে না। খুব সফল মানুষও আত্মহত্যা করে, কারণ ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার। মানুষের মস্তিস্ক যে অর্ডার বা নিয়মে চলার কথা, সেই অর্ডারে বা নিয়মে মনোরোগীদের মস্তিস্ক চলে না। মনোরোগীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভাবান হতে পারেন। প্রচন্ড ধনী এবং সফল অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস আত্মহত্যা করেছিলেন। সুইডেনের এক তরুণ ফিল্ম মেকার ডকুমেন্টারি ছবি বানিয়ে অস্কার পুরস্কার জিতেছিলেন। চারদিক থেকে প্রশংসা পাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় ছবি বানানোর জন্য প্রচুর টাকাও পাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় ছবিটি যখন বানাচ্ছিলেন, স্যুটিং স্পট থেকে একদিন সোজা হেঁটে গেলেন রেল লাইনের ধারে, রেলগাড়ি আসছে দেখে ঝাঁপ দিলেন। আত্মহত্যা করলেন।
কে যে আত্মহত্যা করবে, কে করবে না তা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না। ডিপ্রেশানে ভোগা মানসিকভাবে সুস্থ মানুষেরা প্রচন্ড বিষন্ন অবস্থায় থাকে। কিন্তু ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারে ভোগা মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষেরা দিব্যি হাসিখুশি থাকে।