মুজিব-ধন্য সেই মেয়ে
★★★★★★★
আলমাস উদ্দীন আহমেদ
———————————-
১৯৭২; রংপুর সার্কিট হাউস
ছোট্ট একটি মেয়ে
দেয়াল টপকে যেয়ে
দৌড় বঙ্গবন্ধু সোজা;
এক পলক দেখার অভিপ্রায়ে
দিগ্বিদিক নেতাকে খোঁজা।
বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যের সুযোগ অবশেষে
রংপুরের কামাল কাছনার জেনিফার এলি
বড় আবেগাক্রান্ত, ২০২১-এ এসে।
নিরালায় ভাবনা দিবস-রাত্রি_
সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তমের ছাত্রী
অসীম আবেগে স্কুল ছেড়ে
গিয়েছিল তেড়ে
সার্কিট হাউসে বান্ধবী মিলে;
উচ্চকণ্ঠে তোলে স্লোগান খাঁটি দিলে।
পেরিয়ে পুলিশের বাধা
সাজেদা চৌধুরীর মুখোমুখি
তার কথায় কক্ষে উঁকিঝুঁকি।
বঙ্গবন্ধু কোলবালিশে হেলান; পাইপ হাতে
কথা চলছিল তোফায়েলের সাথে।
এলি ও বান্ধবীদের অভিপ্রায়_
বঙ্গবন্ধুকে দেখতে চায়।
জনগণের নেতা
একটু করলেন রসিকতা_
‘দেখ তো তোফায়েল, বঙ্গবন্ধু কোথায়?’
এলির জবাব, আমরা ঠিকই চিনি;
এই নেতাই তিনি।
বঙ্গবন্ধু ডাকলে কাছে
ত্বরিত জবাব, অটোগ্রাফ নেওয়ার আছে।
সাথে ছিল না কাগজ-পত্তর
বঙ্গবন্ধু এলির ডান হাত টেনে সত্বর
লিখে দিলেন_ ‘শেখ মুজিব’
সেই স্মৃতি চিরঞ্জীব।
বঙ্গবন্ধুর সে স্মৃতি রাখতে ধরে
অনেক দিন খায়নি সে নিজ হাতে করে।
নেতার হাতের ফুলের তোড়া
একটি গোলাপ ছোড়া
উড়ে এসে পড়ল হাতে;
খুশিতে আত্মহারা সাথে সাথে
এলি দিয়ে যায় স্লোগান প্রাণপণে:
‘আমার নেতা তোমার নেতা, শেখ মুজিব।’
সস্নেহে বঙ্গবন্ধুর হাত এলির মাথায়_
‘ঘেমে গেছিস; এবার থাম;
একটু বলতে দে আমায়।
তোমরা পড়াশুনা করো
সবাই নিজেকে মানুষরূপে গড়ো।
এবার বাড়ি যাও, জয় বাংলা।’
এলির মাথায় দিয়ে হাত
বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ
এ ছবি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর জাদুঘর
রংপুর সার্কিট, দেশের বিভিন্ন প্রান্তর
ফ্রেমবন্দি শোভা পায়।
কালের পরিক্রমায়
বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসাপুষ্ট
সেই মেয়ে গৃহিণী এখন;
‘৭৯ সালে ভালোবাসার বন্ধন
রংপুরের সাংবাদিক আলী আশরাফ স্বামী
প্যারালাইজ্ড; তাকে নিয়ে কাটে দিবস-যামী।
স্নাতক পাস এলির জীবন ঢাকা অন্ধকারে
স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সম্বল;
দ্বিতীয় রোজগার নেই একেবারে।
স্মৃতিপটে বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোঁয়া অমলিন
যতদিন বেঁচে আছে এলি
সে হাত ভুলিবে না কোনোদিন।