নাটোর নিউজ গুরুদাসপুর: গত ১৪ বছরে অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের ৬১ জন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের কৃতিসন্তান মানবিক মানুষ মো.রুহুল আমীন রুবেল। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) নাফিজার বিবাহ সম্পুন্ন করেছেন তিনি। নাফিজার বাড়ি রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার শ্যামপুর নগরবাড়ি এলাকায়। নাফিজা ওই এলাকার দিনমজুর খালেকের মেয়ে।
ধনী ও মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের মেয়েদের যেমন জাক জমক ভাবে বিয়ে দেওয়া হয় ঠিক তেমন ভাবেই নাফিজা খাতুনের বিয়ে দিয়েছেন রুহুল আমিন রুবেল। শুধু তাই নয় গত ১৪ বছরে ঠিক এভাবেই ৬১ জন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুধু বিয়ে দিয়েই শেষ হয়না তার দায়িত্ব। বিয়ের পর আজীবন ওই মেয়েদের নিজের সাধ্যমত সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।
তবে সমাজের অন্যান্য মানুষের চেয়ে একটু আলাদা প্রকৃতির অন্যরকম মানুষ রুহুল আমীন রুবেল। তিনি কোন নেতা বা রাজনীতি করার জন্য মানুষের পাশে দাড়ায়না। শুধু মাত্র নিজের মানবিক মুল্যবধ ও পরপারের কথা চিন্তা করে তিনি সমাজের নানা শ্রেণী পেশার অসহায় দিনমজুর হতদরিদ্র পরিবারের পাশে দাড়ান। গরীব দুঃখিদের মুখে হাসি ফুটানোই যার সপ্ন। শৈশব কালে তিনি দেখেছিলেন সপ্ন , যৌবন কালে এসে করছেন বাস্তবায়ন। বিভিন্ন জেলায় নিজের পরিচিত মানুষদের সমন্বয়ে গরিব অসহায় পরিবারের মেয়েদের খুজে খুজে তিনি বিয়ে দিয়ে থাকেন।
নিজের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব ততটুকু তিনি গরীব অসহায় মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দেন। মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য,একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা? সমাজে অনেক বৃত্তবান মানুষ আছে তাদের একটু সহযোগিতায় বেচে যেতে পারে একটি জীবন। তাই তো নিজে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল না হয়েও দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ গরীব অসহায় মানুষদের সেবা করে যাচ্ছেন নিয়মিত। গরীব অসহায় মানুষদের মুখে হাঁিস দেখলেই যেন তার ভাল লাগে। কেননা নিজের যত টুকু আছে সেই সামান্য কিছু থেকেই গরীব অসহায়দের মুখে হাঁিস ফোটান তিনি। প্রতি শুক্রবার গরীব অসহায়দের মাঝে বিভিন্ন ধরনের খাবার,পোশাক,নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন । এমনকি গরীব ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা ও অসহায় মেয়েদের বিবাহ বন্ধনেও তিনি তার সামান্য তহবিল থেকে সহযোগিতা করেন। গরীব অসহায় মানুষেরা এক মুঠো খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকেন শুক্রবারের। সেই খাবার হাঁসি মুখে তুলে দেন তিনি।
গরীবের বন্ধু রুহুল আমীন রুবেল বড়াইগ্রাম উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মৃত মোয়াজ্জেম হোসেন সরকারের ছেলে। ১৯৭৭ সালে মধ্যবিত্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় ওয়ালীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এর পর ঢাকা বাংলা কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে তিনি নিজ এলাকায় ব্যবসা করছেন এবং সমাজের অসহায় হত দরিদ্র মানুষদের সেবা করছেন।
রুহুল আমীন রুবেল জানান, পড়াশোনা শেষ করার পর কোন চাকুরীর চেষ্টা করেননি তিনি। ব্যাবসার প্রতি তার অনেক আগ্রহ ছিল এবং সেই সাথে নিজের এলাকার গরীব অসহায় মানুষদের যেন সেবা করতে পারে এজন্য এলাকার বাহিরে যাওয়ার সুযোগ হলেও সে যায়নি । কেননা ছোট বেলা থেকেই তার সপ্ন নিজের গ্রামে থাকা গ্রামের মানুষদের সেবা করা। যদিও কয়েক বছর ঢাকাতে থাকা লেগেছিল তবুও সেটা পড়াশোনার জন্য। স্কুল জীবন থেকেই তিনি নিজের সহপাঠিদেরকে অনেক ভাবে সাহায্য করেছে। এরপর পড়াশোনা শেষ করে আসার পর একটি হার্ডওয়ার ও ঔষধের দোকান করেন। সেখানকার আয় দিয়ে সংসার চালিয়েছেন এবং গরীব অসহায়দেরকে সাহায্য করেছেন। বর্তমানে তিনি বিএম মোবাইল হাউস,বিএম লেডিস কর্নার পরিচালনা করছেন ও প্রতি শুক্রবারে গরীব অসহায়দের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন। তার ভবিষৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার তেমন কোন বড় পরিকল্পনা নেই শুধু গরীব অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে চাই ও তাদেরকে সহযোগিতা করতে চাই এবং সর্ব শেষ তিনি তার মরহুম পিতা-মাতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন মহাল আল্লাহ পাক তাদেরকে যেন জান্নাত বাসী করেন।