গান্ধারী ভারতমাতা
দেবেশ ঠাকুর
একজন ভারতীয় মুসলিম দিদিমণির চাকরি চলে গেছে
ভারতের ভোটার কার্ড, আধার, প্যান্, হয়তো পাসপোর্ট
তবু সে সন্দেহভাজন ভারতীয়
সেদিন ভারতীয় টিমের নেতিয়ে পড়া বোলিং
আর ঘুমিয়ে পড়া ব্যাটিং দেখে
আশি কোটি ভারতীয়ের সংলাপের নির্যাস,
— এরা কেন খেলতে যায়!
— রোহিত বরং কিছুদিন ডাংগুলি খেলুক।
— চোট পাওয়া হার্দিক জেনে শুনে কেন মাঠে নামে!
—শামি স্বামীহারা। ডুবনেশ্বর ডুবিয়েই ছাড়বে।
— কোহলি নিজের জন্য খেলে। আর অনুষ্কার জন্য।
কথাগুলি নির্বিষ।
যারা বলেছেন তাঁরা বিপুলভাবে ভারতীয়।
সেদিন স্টেডিয়ামে হিজাব-পরা
এমন কয়েকজন ভারতীয়কে দেখেছিলাম,
বাবর আর রিজওয়ানের এক একটা ছক্কা
যাদের পাঁজরে গিয়ে লাগছিল,
হতাশায় আর্তনাদ করে উঠছিল।
আমি আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করি
এবং আমি ভারতীয়।
উসাইন বোল্টকে সমর্থন করি
এবং আমি ভারতীয়।
মহাবিদ্রোহের তাবৎ জনগণ যখন
বাহাদুর শাহ জাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে দিলেন
বাদশার বেতনভুক মির্জা গালিব
তখন কবিতা লিখছেন ব্রিটিশের হয়ে।
এবং গালিব একজন বিখ্যাত ভারতীয়।
ইসমত চুঘতাই যখন প্রকৃতি আর প্রগতি নিয়ে
সংগ্রামের মুখ এবং ঘোষণা করেছিলেন,
এক চিলতে জমি আমি চাইনা,
আমাকে দাহ কর ।
হাড়-পোড়া ছাই ছড়িয়ে দাও গম ক্ষেতে।
উর্বর হোক ভূমি।
সাদাত হোসেন মান্টো সূর্য রশ্মির মতো উদ্ভাসিত
দেখেছিলেন মানবতার বিজয়কেতন।
গান্ধারী আফগানিস্তানের মেয়ে তালিবান নন। তবু চোখে পট্টি বাঁধা।
তালিবান নয়
তবু ভারত রাত জেগেছিল
আফগানিস্তানের জন্য
গলা ফাটাতে ঊণত্রিশে অক্টোবর
এবং তারা চরম ভারতীয়।
গান্ধারী,
হয় চোখের পট্টি খোলো, ভুবন দেখো আরেকবার,
মনুর আঘাতে সন্তানের জানুভঙ্গ হয়
এ দৃশ্য যেন দেখতে না হয়।