দাস জীবন
চন্দ্রশিলা ছন্দা
বিনয় আমাকে কিছু তৃনতুল্য
বোধের জন্ম দিয়েছে।
ক্রমশ ক্ষুদ্র হতে হতে তুচ্ছ পদদলিত ;
যেন অবধারিত অবজ্ঞার এক
লিখিত পত্র হাতে
পৃথিবীর পথে পরিক্রমণ আমার।
দুর্বল পরিচিতির মারকারি কিছু দাগ ছাড়া
সরলতার বিনিময়ে ভাগ্য জোটেনি ভালোবাসা
প্রবঞ্চনার ভারে কালো হয়ে আসা মেঘ ঠেকাতে
সূর্যের কাছে প্রার্থণা রাতভর
তবু ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঙন
প্রতিহত করতে পারিনি আমি।
আর কৃতজ্ঞতা?
আমাকে দিয়েছে অপ্রত্যাশিত এক দাস জীবন!
লজ্জা অপমানবোধগুলো
প্রতিনিয়ত চিনচিন ব্যথায়
ফেনায়িত হয়েছে পশ্চিম থেকে পূবে
অথচ কাগজ কলমে সেই কবেই
বিলুপ্ত হয়েছে বিনিময় প্রথা!
উৎসারিত সম্ভাবনার জলে হাত রেখে প্রশ্ন করেছি,
কি বাধ্যবাধকতা ছিল আমার,
এই সবুজ পাহাড়ে জন্ম নেয়ার?
এমন তো হবার কথা ছিলো না!
কারো অনুগ্রহের অপেক্ষায়
অথবা ধরো অনুদানে বাঁচবে জীবন!
এ বড় গ্লানির।
ইনসোমোনিক রাতগুলোয় প্রায়ই
স্বপ্নপ্রবণ হয়ে ভেবেছি,
কখনো কোন একদিন প্রবল বৈশাখী ঝড়ে
শুকনো পাতা হয়ে উড়ে যাবে জীবনের সমস্ত গ্লানি
স্বচ্ছলতা আর সম্মান এসে আসন পেতে বসবে আমার উঠোনে;
জীবন হবে জীবনানন্দময়
অথচ অবজ্ঞার কালসিটে মুছে
পৌঁছানো হলো না আর জীবনের কাছে
মধ্য যুগের রাজতন্ত্রীয় চাবুকে
নীরব রক্তপাত আমার বর্ণহীন এই দাস জীবনে।
তবু পরিত্যক্ত কুয়োর অতল তলানি জলের মত
একটুখানি আত্মসম্মানবোধ
হঠাৎ হঠাৎ চিকচিক করে ওঠে
অনেকটা নির্লজ্জ হয়ে কানামাছি খেলি কবিতার সাথে,
স্রোতের বিপরীতে বৈঠা চালাই।
সেখানেও দেখি স্বপ্ন অবদমনের সংগীত,
গাদা খানিক অস্বীকৃতি লেপ্টে আছে বুকে পিঠে;
জন্ম দাগ হয়ে…
তথাপি মৃত প্রায় নদীর চর হয়ে জেগে থাকি অনন্ত কাল।