সন্ধ্যা নামতেই কামাল ভাইয়ের ফোন
আব্দুল্লাহ আল ইমরান
কামাল ভাই মানে কামাল পারভেজ। আমাদের চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের চট্টগ্রাম স্টেশন প্রধান। এইটুকু বললে অবশ্য মানুষটার ব্যপ্তী কিংবা গুরুত্ব বোঝানো হয় না। আরও কিছু বলতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের অনুকরণীয় অগ্রজ, ক্ষেত্র বিশেষ ভরসাস্থল- এসব বললে-টললে হয়তো কিছুটা আচ করা যাবে, আমাদের, বিশেষত চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কর্মীদের কাছে কামাল পারভেজ কতোটা জরুরি এক নাম। দিনভর শিল্প-সাহিত্যের গুরুত্ব আর ইন্টারনেট আসক্তির ক্ষতিকর দিক নিয়ে বক্তৃতা করে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত আমাকে মেরিন মিউজিয়াম ক্যাফের সরু পথের ডগা থেকে এক রকম জোর করেই তুলে নিলেন নিজের গাড়ীতে। নিয়ে গেলেন কর্ণফুলি ব্রিজের দিকে। মাঝ বরাবর নামলেন, যেখান থেকে তাকালে, যত দূর চোখ যায়, দুই তীরের বন্দরনগরীকে মায়াবী এক গোলকধাঁধাই যেন মনে হয়। ক্রমেই গভীর হতে চলা রাতের অপার্থিব সেই সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পেশাগত জীবনের লুপ্তপ্রায় স্বপ্ন-বাস্তবতার কত কত অব্যক্ত কথামালা যে আমরা ভাগাভাগি করলাম! আর এভাবেই প্রসঙ্গক্রমে ‘মফস্বল সাংবাদিক’-এর তকমা বিষয়ক পুরনো এক দুঃখবোধের কথাও এলো। বললেন, ‘আমি মফস্বল সাংবাদিক বলছি’ শিরোনামে একটি বই লেখার প্রস্তুতির কথাও। তারপর একের পর এক ফ্লাইওভার নীরবতা পেরিয়ে ফিরলাম পাহাড়ের মাঝে খাবি খাওয়া শহরে, খেলাম বারকোডে, বীর চট্টলায়। এরপর পতেঙ্গা নিয়ে যেতে চাইলেন, সত্যি বলতে আমারও ইচ্ছা করছিল। শেষ পর্যন্ত অনেক ভাবনায় মন আর সায় দিল না। সারাদিনের অফিস শেষে বউ-বাচ্চার কাছে না ফিরে গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে থাকবেন, তাও আবার স্টেশনের শত সহকর্মীর একজনের সঙ্গে, এ কথা ভাবতেই আমার অপরাধবোধ হচ্ছিল। সেই অপরাধবোধ আর না বাড়িয়ে হোটেলে ফিরলাম। কামাল পারভেজই নামিয়ে দিয়ে গেলেন। বুকের মধ্যে তখনও ভালো লাগার অনুরণন। রুমে ফিরতে ফিরতে কত কথা মাথায় এলো। ভাবলাম, দেশজুড়ে এমন কামাল পারভেজরা আছেন বলেই স্টেশনগুলো মাথা উচু করে দাঁড়ায়, গণমাধ্যমও দিনশেষে (কিঞ্চিত হলেও) গণমানুষের হয়ে ওঠে। অথচ আমরা তাদের ‘মফস্বল সাংবাদিক’ বলেই ডাকি!