মহাকালে রেখাপাত
স্বকৃত নোমান
ইকবালের সহযোগীরা ধরা পড়েছে। আজ হোক কাল হোক, ইকবালও আশা করি ধরা পড়বে। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা কি বিশ্বাস করবে হনুমানের মূর্তির পায়ে এই মুসলিম সন্তানরা কোরান রেখেছে? কাল সকালে কোনো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীর কানের কাছে মুখ নিয়ে এই প্রশ্নটা করবেন। দেখবেন, সে উত্তর দেবে, ‘ইকবাল তো ইয়াবাখোর, সে পাগল। সে না বুঝে এমন কাণ্ড করেছে।’ যদি প্রশ্ন করেন, ‘তার সহযোগীরা তো পাগল না, তারা কেন এই কাজ করল?’ তখন সে উত্তর দেবে, ‘এটা ইহুদি-নাসারার ষড়যন্ত্র। কাফেরেরা তাদেরকে দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’ যদি প্রশ্ন করেন, ‘ইহুদি নাসারার ষড়যন্ত্রে একজন মুসলমান পা দেবে কেন? ইহুদি-নাসরারারা কেবল মুসলমানদেরকে দাবার গুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে কেন?’ তখন সে ক্ষেপে গিয়ে উত্তর দেবে, ‘এটা সরকারের সাজানো নাটক। ইন্ডিয়ার দালাল আওয়ামী লীগ সরকার হিন্দুদেরকে রক্ষা করতে, ভারতকে খুশি করতে এই নাটক সাজিয়েছে।’ অর্থাৎ সে নিজের দোষ মেনে নিতে নারাজ। সে আত্মসমালোচনা করতে নারাজ। অর্থাৎ সে রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা, পুলিশ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজ্ঞানের আশীর্বাদ সিসি ক্যামেরার ফুটেজকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। কেন পারছে না? কারণ তার মাথায় সেট হয়েছে আছে বিশ্বাসের এক ভয়ংকর ভাইরাস। এই ভাইরাস দূর করার জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত না এন্টি ভাইরাস আবিষ্কার হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মানুষে রূপান্তর করা যাবে না। কী সেই এন্টিভাইরাস? মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার, যিনি কুমিল্লার ঘটনার রেশ ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ করেছিলেন, তার কথা আমি ধার করে বলি, ‘আবেগ এবং বিবেক দুটোই লাগবে। বিবেকহীন আবেগ তোমাকে পাগল বানাইয়া দেবে।’ প্রশ্ন, বিবেক কে তৈরি করে দেবে? কোন কারখানায় বিবেক তৈরি হয়? সেই কারখানা কোথায় অবস্থিত? যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন এবং যারা সমাজের অগ্রসর শ্রেণী, তাদেরকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। ভাবার সময় এসে গেছে। সমাজের ক্ষত অনেক গভীর। উপর থেকে শুধু মলম দিলে কাজ হবে না, মূলে চিকিৎসা করতে হবে। বিবেক তৈরির কারখানা আবিষ্কার করতে হবে। আবিষ্কার করা না গেলে নতুন কারখানা তৈরি করতে হবে। নইলে কোনোভাবেই একটি সভ্য জাতি, একটি উন্নত রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নইলে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। কয়টা সামাল দেবেন? সামাল দিতে দিতে একদিন দেখা যাবে নিজেরা নিজেদেরকে ব্যর্থ ও দেউলিয়া ঘোষণা করে হাল ছেড়ে বসে আছেন।