নাটোর নিউজ: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খ আলী আর রাজীর নাটোরের নিজের বাড়িতে পারিবারিক অনুষ্ঠান চলার সময় গান বাজানোকে কেন্দ্র করে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । শুধু তাই নয় অনুষ্ঠান চলাকালে দূর্বত্তরা শিক্ষককে হুমকি –ধমকি দেয় এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে ,গত ১৪ অক্টোবর বৃহ¯পতিবার দূর্গাপূজার নবম দিনে শহরের বড়গাছা পালপাড়ায় শিক্ষক খ আলী আর রাজীর নিজবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে ।
গত শনিবার রাত ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন শিক্ষক আলী আর রাজী। সেখানে আলী আর রাজী ঘটনার বর্ণণা দেন।তিনি জানান, পরিবার নিয়ে গত ১১ অক্টোবর নাটোর এসেছিলেন পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বাসায় আগত নতুন অতিথিকে বরণ করতে গত বৃহ¯পতিবার অর্থাৎ দুর্গাপূজার নবমীর দিন উৎসবের আমেজ ছিল সেখানে। মেয়েরা নিয়েছিল শরতের সাজ। উল্লাস হইচই করছিল মেয়েরা। আর ¯িপকারে গান বাজছিল। রাত সোয়া আটটার দিকে হঠাৎ একদল তরুণ বাসার প্রধান দরজায় অবস্থান নেন। পরে গেট খুলতেই বেশ কিছু তরুণ তাঁকে ধমক দেন। তরুণেরা গালি দিয়ে বলতে থাকেন, ‘তোরা এখানে কী করিস? এখানে মাদ্রাসা আর তোরা এসব কী করিস?
শিক্ষক আলী আর রাজী লেখেন, আমি হকচকিয়ে যাই। বলার চেষ্টা করি, এটা বাসাবাড়ি। আপনারা কারা? আপনারা এসব জিজ্ঞেস করার কে? এসব প্রশ্ন করার পর তরুণদের একজন বলেন, ‘মাদ্রাসার সামনে এসব চলবে না। বন্ধ কর এসব।’ এরই মধ্যে একজন ধুম করে আমার বুকের নিচে ঘুষি বসিয়ে দেন। পরে আমি দ্রুত পকেট গেটটা টেনে ওদের নাগালের বাইরে চলে যাই। তরুণেরা ইট দিয়ে ফটকে হামলা করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন আলী আর রাজী। এতে ফটক ছিদ্র হয়ে যায়।
এ ঘটনার কারণ হিসেবে শিক্ষক খ আলী আর রাজী লিখেছেন, ‘আমাদের বাসাটা হিন্দুপাড়ায় পালপাড়া নাম। বাসার তিন দিকেই হিন্দুবাড়ি। আমাদের বাসার দোতলায় ভাড়া থাকেন এক হিন্দু পরিবার। সামনের দিকটায় সরু রাস্তা। সেই রাস্তার পাশে শত বছরের প্রাচীন কালীমন্দির। তারই পাশে ফাঁকা এক ছোট জায়গায় বছর দুয়েক হয় গড়ে উঠছে মাদ্রাসা। সেই মাদ্রাসার কথা বলে হামলা হয়ে গেল আমাদের বাসায়। আর সেদিন ছিল নবমীর দিন। হিন্দুপাড়া হলেও কুমিল্লার দুর্ঘটনার কারণে হিন্দুরা ছিল খুব চুপচাপ, দুয়ার দিয়ে ছিল প্রায়। সেখানে আমাদের বাসায় মেয়েরা হৈ হিল্লোর করছিল। বাসার ও আঙিনার সমস্ত আলো জ্বলছিল। গেটের নকশার কারণে বাহির থেকে দেখা যায় আমাদের বাড়ির আঙিনা। আমার মুক্তিযোদ্ধা দুই কাকার ভাস্কর্যসহ কিছু ভাস্কর্য রয়েছে আমাদের বাসায়। ওই তরুণেরা যেটুকু দেখতে পেয়েছে তাতে হয়তো ধরে নিয়েছিল, এটা একটা হিন্দুবাড়ি। এ ছাড়া ওই ছেলেদের চেহারা ছিল বখে যাওয়া, নেশাসক্তদের মতো। তাদের চুলের ছাট, পরিধেয় কিছুতেই কোনো
ধর্মের সামান্য ছোঁয়াও ছিল না। কিন্তু তারা হামলার ভিত্তি তৈরি করতে চেয়েছে, মাদ্রাসার নামে।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনসুর রহমান বলেন, ঘটনা জানার পর পরই তিনি ফোর্স নিয়ে ওই শিক্ষকের বাসায় যান । জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।