Homeমুক্তমত‘চলমান ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই, মরীমণির মুক্তি চাই’ - এহসান মাহমুদ

‘চলমান ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই, মরীমণির মুক্তি চাই’ – এহসান মাহমুদ

পরীমণি ইস্যুতে আমার অবস্থান এবং কৈফিয়ত
পরীমণি ইস্যুতে আমি কেন এতো সোচ্চার? পরীমণির সাথে আমার আগের যোগাযোগ আছে কিনা? আমি ওই দলের কিনা? এই সব এক্টিভিজম চালানোর জন্য সিটি ব্যাংক এমডি মাসরুর আরেফিন আমাকে অর্থ দিয়েছেন কিনা? (যেহেতু মাসরুর আরেফিন আমার পূর্ব পরিচিত। তিনি সাহিত্যিক। আমিও তাই। আমাদের একত্রে ছবিও খুঁজে পেয়েছেন অনেকে)। ভাই আপনার লেখা আমার ভালো লাগতো, কিন্তু পরীমণির মতো একটা নষ্ট নারীর জন্য আপনি এভাবে উঠে-পড়ে লাগছেন, খুব কষ্ট পাইছি। আপনার কাছ থেকে এটা আশা করি নাই। – এমন নানা কথা আমার স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে এবং ইনবক্সে পেয়েছি।
সবার জন্য আলাদা আলাদা করে না বলে এখানে বলছি।
যারা জানতে চেয়েছেন পরীমণি ইস্যুতে কেন আমি সোচ্চার, তাদের জবাবে বলছি- প্রথমত আমি মনে করছি চলমান ব্যবস্থায় পরীমণির প্রতি অবিচার করা হচ্ছে, তাই পরীমণির পাশে দাঁড়িয়েছি। প্রচলিত আইনে পরীমণি যাতে সুবিচার পায় এবং তদন্তকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে যাতে আটক রাখা না হয়, বিচারে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই যাতে তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা না হয়- আমার এটুকু চাওয়া।
যারা বলছেন কেন পরীমণি ইস্যুতেই আছি- আপনাদের জন্য বলছি। দূর অতীতের কথা (টিপাইমুখ বাঁধ বিরোধী আন্দোলন, কুষ্টিয়ায় বাউলদের আক্রমণ, তনু হত্যা, পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতাসহ আরও অন্তত ১ ডজন ইস্যুতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি) না বলে কাছাকাছি সময়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সময়ে আমি শুরুর দিকেই আমার অবস্থান প্রকাশ করেছিলাম। রোজিনার মুক্তি চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি বৃষ্টিতে ভিজে। এসব করেছিলাম সাংবাদিক হিসেবে অপর এক সাংবাদিকের জন্য। আর আজকে পরীমণির জন্য করছি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে। সংক্ষুব্ধ নাগরিক হিসেবে। বিবেকের তাড়নায়। যে প্রক্রিয়ায় একজন চিত্রনায়িকাকে আটক করা হয়েছে, ভীতি ছড়িয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতাধিক সদস্য উপস্থিত হয়ে তা দেখে নাগরিক হিসেবে আমি ভীত ও বিহ্বল হয়ে পড়েছি। পরীমণি কোনো দাগী আসামী, জঙ্গী সদস্য ছিলেন না, আত্মঘাতী বোমা নিয়ে তিনি বাসায় অবস্থান করছিলেন না, এতো বিপুল আয়োজন করে তাকে আটকের দরকার ছিল কি? আপনার নিজের কাছেই একবার উত্তর খুঁজে দেখুন দয়া করে।
কেউ কেউ আমাকে বলেছেন সিটি ব্যাংক মাসরুর আরেফিনের হয়ে আমি কাজ করছি কিনা? উত্তর হচ্ছে- না। মাসরুর আরেফিনের সাহিত্য প্রচেষ্টা আমার পছন্দ। আমি তার বই নিয়ে পত্রিকায় লিখেছি। তার সাথে দেখা হয়েছে কয়েকবার। তিনি আমাকে পছন্দ করেন এটুকু বুঝতে পারি। চলমান পরীমণি ইস্যুতে তার সাথে আমার কোনো আলোচনাই হয়নি। তার সাথে সবশেষ দীর্ঘ সময় কথা হয়েছিল সম্ভবত তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার সময়ে। ওই আলোচনায় তিনি আমার কাছে করোনার অভিজ্ঞতা শুনতে চেয়েছিলেন। তাই পরীমণির পক্ষে আমার অবস্থান নেওয়াটা মাসরুর আরেফিনের হয়ে কাজ করাটা বলে যারা বলছেন- তাদের কল্পনাশক্তি বেশ ভালো নয় কেবল ইস্পাতের মতো শক্ত বলতে হয়!
বেশ কয়েকজন বলেছেন, পরীমণির মতো নষ্ট (!) নারীর পক্ষে আমি কী করে স্লোগান দিচ্ছি। দেখুন আপনার এবং আমার মধ্যে এখানেই বড় তফাৎ। আমি মানুষের ভালো-মন্দ বিচারে বা চরিত্র সনদ দেওয়ার কেউ না। তাই আপনি যতোটা সহজে পরীমণিকে নষ্ট বলতে পারছেন, আমি পারছি না। আমি দেখছি, এই ঘটনায় পরীমণি কীভাবে এবং কেন হেনস্তার শিকার হলেন। একজন নারী যে কিনা দিন কয়েক আগেই তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনলেন, আজকে তাকে যে অভিযোগ এনে আটক রাখা ও রিমান্ড দেওয়া হচ্ছে- তা আমার কাছে অবিচার মনে হয়েছে। তাই আমি পরীমণির পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।
এইবার আমি আমার কথা শেষ করছি। আপনারা যারা নিয়মিত আমার লেখা পড়েন, তারা দেখবেন হয়তো আমি করোনার শুরু থেকেই চিকিৎসাব্যবস্থার অসংগতি নিয়ে কথা বলেছি। দেশে বিনা বিচারে মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছি। রাতের ভোট নিয়ে প্রায় কথা বলি। সুশানের অভাবের কথা বলি। কই তখন তো কেউ এভাবে প্রতিবাদ মুখর হচ্ছেন না আমার? এখন হচ্ছেন? কেন হচ্ছেন- এই উত্তরটা আপনার নিজের ভালো করে জানা নেই। আমি বলছি, শুনে রাখুন- এর জন্য দায়ী দীর্ঘদিনের অভ্যাস আর পুরুষতন্ত্র। অঅপনি আপনার চেনা জগত থেকে বের হতে পারছেন না। পুরুষতন্ত্র আপনার মগজে বটের শেকরের মতো ছড়িয়ে আছে। পুরুষের শিশ্ন আপনাদের মগজকে খেয়ে ফেলেছে। পুরুষতন্ত্র একটা অসুখ, আশ্চর্য হচ্ছে- এ অসুখে এদেশের পুরুষের চেয়ে নারীরাই এখন অধিক আক্রান্ত। তাই নারীরা বুঝতে পারছেন না, তাদের যোনী আছে ঠিকই, কিন্তু মগজে রয়েছে পুরুষের শিশ্ন! সেই শিশ্নের অব্যাহত চাপে তারা নিজেরা নানা ভুল কথা বলছেন সঠিক মনে করে। ভুল আচরণ করছেন শুদ্ধ ভেবে। পাশাপাশি অপরে যখন সঠিক আচরণ করছে সেটা তাদের কাছে ভুল হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
এই পুরুষতন্ত্রকে লাত্থি দিয়ে বিদায় করে নর্দমায় না ফেলা পর্যন্ত সমাজের উন্নতি হবে না। এ লত্থিটা যতো সম্ভব শক্তিশালী করা যাবে ততোই আপনার আমার সবার মঙ্গল। তখন আর পরীমণিদের তৈরি হতে হবে না। আটকও করতে হবে না। আর এভাবে নাগরিকদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হবে না।
নোট: একটি কথা এখানে বলতে চাই, চিত্রশিল্পী তৌহিন ভাই আমি বলার পরে খুব অল্প সময়ে ‘চলমান ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই/ মরীমণির মুক্তি চাই’ লেখা সংবলিত গ্রাফিক্স ডিজাইন করে ব্যানার বানিয়ে দিয়েছেন। আমরা আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম, আমাদের এই ব্যানার ডিজাইন অনেকেই ব্যবহার করছেন। কয়েকজন দেখলাম, বিভিন্ন সময়ে আমার মতের অমিল ছিলেন, তারাও এটি ব্যবহার করছেন। এটি থেকে শিক্ষা নিলাম যে, সঠিক দাবী তোলা গেলে সবাইকে একত্রিত করা সম্ভব।
১১ আগস্ট ২০২১
লেখক-গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও গণমাধ্যমকর্মী।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments