Homeসাহিত্যসাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র পিকনিক, মিলন সমাবেশ - পলি শাহীনা

সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র পিকনিক, মিলন সমাবেশ – পলি শাহীনা

সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র পিকনিক, মিলন সমাবেশ – পলি শাহীনা
প্রায় দেড় বছর পর গত ৫ জুন বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন দুঃসময়ের পর্দা সরিয়ে, বন্দিত্বের উচুঁ দেয়াল টপকে ওয়েস্টচেষ্টার কাউন্টির ক্রটন পার্কে ‘সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক’র পিকনিক কিংবা বন্ধুদের মিলন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন আমরা কেউ কাউকে করোনা ভয়ে পাশ কেটে যাই নি, সমস্ত ভীতি ভুলে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। মনে হয়েছিল শতাব্দী পর আমাদের দেখা হয়েছে! মহাপৃথিবী সম কথা বুকে নিয়ে আমরা একে অপরের জন্য অপেক্ষা করছিলাম! এ স্ব শরীরী সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে আমাদের সে ইচ্ছে পূর্ণতা পেয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আক্রান্ত পৃথিবীর এপি সেন্টার খ্যাত আমেরিকার নিউইয়র্ক শহর এখন বিশ্বের অন্য অনেক স্থানের চেয়ে ভালো আছে। করোনা সংক্রমণের হার এ শহরে প্রতিনিয়ত উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।
” বন্ধুত্ব একমাত্র সিমেন্ট যা সবসময় পৃথিবীকে একত্র রাখতে পারবে “
বন্ধু যখন হাত বাড়িয়ে দেয় মনে হয় গোটা পৃথিবী হাত বাড়িয়ে দিয়েছে! বন্ধু যখন ডাকনাম ধরে ডাকে ফুসফুসে অক্সিজেনের মাত্রা একদম ঠিকঠাক থাকে! বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে শরীরের ইমিউনিটি সত্যি সত্যি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে! দীর্ঘদিন পর খোলা আকাশের নিচে হার্ডসনের তীরে সাহিত্য একাডেমির বন্ধুরা সীমাহীন আনন্দের খিল খুলে দেয়! গত দেড় বছরের বিষন্নতা, দুঃশ্চিন্তা, অস্থিরতা ঝেড়ে একে অন্যের সঙ্গে চৌদিক আলো করে প্রাণভরে হেসে উঠে! জুনের ৪ তারিখ দিনভর ঝড়বৃষ্টি হলেও পরের দিন ৫ তারিখ ক্রটন পার্কের হার্ডসনের পাড়ে জগতের সমস্ত আলো এসে যেন পড়েছিল সাহিত্য একাডেমির বন্ধুদের মুখে!
সকাল হতে নিউইয়র্কের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহিত্য একাডেমির বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীরা একে একে এসে আনন্দ ভূমে জড়ো হতে থাকে। যাঁরা নানান কারণে আসতে পারেন নি তাঁদেরকে ভীষণ মিস করেছি। আশা রাখি খুব শীঘ্রই তাঁদের সঙ্গে দেখা হবে। আগত সকলের হাসির বন্যায় গত দেড় বছরের অন্ধকার আস্তে আস্তে হার্ডসনের জলে ভেসে যায়। চা ঠান্ডা হয়ে যায় কিন্তু আমাদের গল্প শেষ হয় না। সকাল পেরিয়ে তপ্ত দুপুর নামে। মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে আবার আমাদের আড্ডা বসে। পায়েসের মিষ্টি ঘ্রাণ এসে নাকে লাগে। গনগনে দুপুর যখন হাওয়ার বিকেল, ঠিক তখনই আইসস্ক্রিমওয়ালার হাঁক আমাদের ডাক পাঠায়! আমরা মনের আনন্দে পার্কে দাঁড়িয়ে সবুজের গা ঘেঁষে নিজের মতো করে আইসক্রিম খাই।
গোটা পৃথিবীর শরীরজুড়ে করোনা ঝড়ের চিহ্ন বিদ্যমান। সময়ের ক্ষত বুকের গহীনে লেপটে থাকলেও, আলোর কাছে অন্ধকার হেরে যায়। এটি প্রকৃতির নিয়ম। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কোন না কোনভাবে কোভিডের আঘাত বুকে বয়ে বেড়াচ্ছে। এত এত আনন্দের ভীড়েও যাঁরা এ ঝড়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন খুব তাঁদের কথা মনে পড়ে। চোখের সামনে তাঁরা না থাকলেও স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে, থাকবে। প্রার্থনা করি তাঁদের স্বর্গবাস হোক, এবং আমাদের পৃথিবী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুক।
” ঝড়ের কথায় রাগ হল?
ঝড়ের প্রসঙ্গ তবে থাক
জীবনের আলোচনা হোক “
দিনভর শতাধিক প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্যে মুক্ত বাতাসে আনন্দঘন সময় উদযাপন শেষে, হার্ডসনের জলে মনের সমস্ত ভীতি, অন্ধকার ভাসিয়ে দিয়ে নীড়ে ফেরা পাখীদের সঙ্গে একে একে আমরাও উড়ে যাই আপনালয়ে। পিচঢালা রাস্তা ধরে গাড়ী ছুটছে শাঁই শাঁই শব্দে। শীতল বাতাসের গায়ে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিতেই কানে এসে সকলের খিলখিল হাসির শব্দ বেজে উঠে! তাঁরা যেন আবারও ডাকনাম ধরে ডাকছে – আয় আয় আয়…
” অবশেষে বাঁশিওয়ালা বাজালেন জাদুর বাঁশি
পাঁচিল পেরিয়ে দীপ্ত পায়ে হেঁটে গেলেন হার্ডসন ইয়ার্ডে
উন্মুখ জনতা যেন জেগেই ছিলেন, অধীর আগ্রহে
প্রাণের টানে দলবলে ছুটে গেলেন পাহাড়ের পাদদেশে,
সেদিন সারাবেলা, ভাইরাস কিংবা ভয় নয়
বুনো তুলো ভাসছিলো বাতাসে বাতাসে
যেন শুভ্র তুলোগুলো আলতো ছোঁয়ায় আগামীর স্বপ্ন বুনছিলো
মৃত্যু উপত্যকা পেরিয়ে জেগে উঠা সবুজ ঘাসে “
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments