নাটোরে আজ মৃত্যু ৯, আক্রান্ত ১১৪, জেলার ২৮৮১ রোগী কি সত্যি হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন?
নাটোর নিউজ:
গত ২৪ ঘন্টায় নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে ৬ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে ৪ জন করোনায় এবং ২ জন উপসর্গে মারা যান। এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাটোরের ৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন করোনায় ও দুইজন উপসর্গের মৃত্যু হয়েছে। সেই হিসেবে সরকারি তালিকা মতে নাটোরে করোনার মৃত্যুবরণ করেছে আজ ৬ জন। করোনা ও করোনা উপসর্গের নাটোরে আজ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০ জন। সরকারি তালিকা মতে এ পর্যন্ত জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৮০ জন।
এসময়ে নতুন করে ১১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। জেলায় মোট আক্রান্ত ৫১৪৩ জন। এদিকে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০৫ জন। হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ২৮৮১ জন।
এদিকে সচেতন সমাজে প্রশ্ন উঠেছে বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ২৮৮১ জন রোগী কি সত্যিই হোমকরেন্টাইন রয়েছেন ? নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলাজুড়ে। করোনা সংক্রমনের শুরুর দিকে কোন পরিবারে করোনা আক্রান্ত হলে সেই পরিবারকে লকডাউন করে দেওয়া হতো। পরিবারের কেউ যাতে বাহিরে বের হতে না পারে তার জন্য প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সেই বাড়িতে বাজার ঘাট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হতো।
কিন্তু বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। যেখানে প্রশাসনিক অন্যান্য দায়িত্ব পালন করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে করোনা রোগীদের পাহারা দেওয়ার প্রশাসনিক বাস্তবতা হাস্যকর। কিন্তু মানুষ অচেতন হয়নি। এর জন্য শুধু মানুষকে দায়ী করা যায় না আমাদের সকল বাস্তবতায় এর জন্য দায়ী। সচেতন সমাজ বলছেন করোনা পরীক্ষার ধীর গতি, ফলাফলও প্রাপ্তিতে সময়ক্ষেপন যার কারণে এই সমস্ত করোনা রোগীরা অবাধে বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নতুন করে সংক্রমিত করছেন শত শত মানুষকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছি আমরা।
বাস্তবতা হচ্ছে জেলায় বর্তমানে যে বিপুল পরিমাণ সংখ্যক করনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবাইকে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। অভিযোগ উঠেছে সরকারি অনেক কর্মকর্তা অথবা অফিশিয়াল কোন স্টাফ, গাড়ির ড্রাইভার কিংবা অন্যান্য সাধারণমনুষ কেউই মানছেন না এ সমস্ত নিয়ম নীতি। আক্রান্ত হবার পরেও হাট-বাজার সমস্ত জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। আসলে এগুলো রোধ করবে কে? জনসচেতনতা ও সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া আমাদের বাঁচা স্বম্ভব নয় বলে মনে করছেন সবাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সমাজ কর্মী জানান, এরইমধ্যে লকডাউনের কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে শীতলতা। হাটে বাজারে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু মানুষ নয় প্রয়োজন মানুষকে বাহিরে বের করে নিয়ে এসেছে। আর প্রশাসন তো বাহিরের কেউ নয় আমাদেরই ভাই ব্রাদার আত্মীয়-স্বজন। যেখানে দুবেলা-দুমুঠো খাবার সংস্থান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে সেখানে রোগ-বালাইয়ের ভয়ে তাদের কাছে তুচ্ছ। আগামী কোরবানির ঈদ হাট বাজার এবং সাধারন মানুষের কর্মহীনতা সব মিলিয়ে কোথায় যাবে স্বদেশ আমরা কেউ জানি না।
১২ জুলাই ২০২১ রামেক হাসপাতাল করোনা আপডেট
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গেল ২৪ ঘন্টায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৬ জন করোনা পজেটিভ ও বাকি ৮ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ৫ জন, নাটোরের ৪ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর ২ জন করে ৪ জন, পাবনার ১ জন রয়েছেন। জুলাই মাসের ১ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মৃত্যু ২০৩ জন, পজিটিভ ৫৬ জন।
গেল ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেলের ২টি আরটিপিসিআর ল্যাবে ৫১৩ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে এদের মধ্যে ১৫২ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে।
হাসপাতালের দেয়া তথ্য মতে রাজশাহীতে করোনায় আক্রান্তের হার ২৯.৬৩ শতাংশ। গেল ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে নতুন ৬৪ জন। হাসপাতালটিতে ৪৫৪ শয্যার বিপরীতে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫১৭ জন রোগী। ২৪ ঘন্টায় সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৮ জন।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্য মতে জেলার ৯টি উপজেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ১৭১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পজিটিভ মিলেছে ৩০৪ জনের। শতাংশের হারে যা ১৭.৭৪%।