ফজলুর রহমান,বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদাতাঃ নিম্ন আয়ের মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পরেছে এই করোনাকালে। যার ফলে তাদের আয়ও কমেছে। আর এর প্রভাব পরেছে পরিবারের শিশু সন্তানের উপর। করোনার প্রভাবে পরিবারের আয় কমার পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় বেড়েছে শিশু শ্রম।তবে শিশু শ্রমে কি পরিমান শিশু যুক্ত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে বিভিন্ন কর্মের সাথে শিশুদের যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার গুলোই। উপজেলার মালঞ্চি, তমালতলা, বাটিকামারী দয়ারামপুর মত গুরুত্বপূর্ণ বাজার গুলোতে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় কথা হয় বাটিকামারী বাজারে একটি ওয়ার্ক সপ দোকানের শ্রমিক ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত (১৩), দয়ারামপুর বাজারে কথা হয় ওয়ালিয়ার দিনমজুর বাবার ছেলে ভ্যান চালক তুহিন (১৫) (ছন্দ নাম) এবং রাকিব (১৪) ছন্দ নাম) এর সাথে। তারা জানায়, তারা স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। এই করোনার জন্য তাদের বাবাদের আয় রোজগার কমে গেছে আর স্কুলও বন্ধ, তাই সংসারের আয় বাড়াতে তারা শিশু শ্রমে নেমেছে।
এ বিষয়ে অনেকের অভিভাবক মুঠোফোনে জানান, করোনাকালে সন্তানদের বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পাশাপাশি তাদের কর্ম সুযোগ কমে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছেন তারা। এমন অবস্থায় নিরুপায় হয়ে তাদের ছেলেদের কর্মে লাগিয়েছেন। তমালতলা বাজারে দেখা যায়,এক শিশু দোকান ঝাড় দিচ্ছে। জানতে চাইলে সে জানায়,পরিবারের সমস্যা থাকায় সে দোকানে চাকুরী করছে।
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলার দয়ারামপুর মিশ্রী পাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব’র সাথে। শিশু শ্রম নিরসনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। অনেকেই মোবাইল গেম এমনকি নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় অনেক অভিভাবকই সন্তানদের বিভিন্ন কর্মে নিয়োগ করছেন। প্রকৃত শিশু শ্রম নিরসনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্ব স্ব অবস্থান থেকে সকলেই কাজ করতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম গকুল বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে এখনো শিশুশ্রম দেখা যায়, যেহুতু শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কেউ যদি শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে, তাঁকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এই বিষয়ে আমরাও তৎপর রয়েছি উপজেলা প্রশাসনকে নিয়ে শিশুশ্রম নিরসনে আমরা এক যোগে কাজ করতেছি এবং করবো। জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ,বলেন, করোনার আগে শিশুশ্রম বন্ধে তারা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকান্ড করতেন। করোনায় সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তার সঠিক পরিসংখ্যান তার কাছে নেই।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল জানান,বাগাতিপাড়ায় শিশুশ্রম অনন্য এলাকার তুলনায় অনেক কম।আর করোনা কালীন সময়ে স্কুল বন্ধ এদিকে অনেকের পরিবারে আয় রোজকার কমে যাওয়ায় অভিভাবকরা তাদের কর্মে লাগিয়ে দিয়েছেন।তবে এই সময়ে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ( বিভিন্ন দোকান,লেদ-গ্যারেজ,মটর ম্যাকানিকাল,হোটেলের মালিকরা যদি সুযোগে নিয়ে শিশুদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করে অবশ্য তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষক, ইমাম,রাজনৈতিক নেতাসহ অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করছি।