নাটোর নিউজ: নাটোরে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ কিংবা বিশেষ লকডাউন দিয়েও থামানো যাচ্ছেনা করোনা উর্ধমুখি সংক্রমন। স্বাস্থ বিধি না মানায় এ পরিস্থিতি বলে দাবি করেছেন নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া সাতদিনের বিশেষ লকডাউনের আজ রবিবার ৫ম দিন চলছে। এই লকডাউনের পরও গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় নতুন করে ২১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৬ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণের হার ৩০.২৭ শতাংশ। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় পরীক্ষা অনুপাতে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, নাটোর সদর হাসপাতালে ৩১ শয্যার করোনা ওয়ার্ডে বর্তমানে ৩৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি।এ পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২১৯৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫৪৪জন আর মৃত্যু বরন করেছে ৩২ জন যার মধে এই জুনেই রয়েছে ৮ জন মানুষ। এছাড়া করোনা লক্ষন নিয়ে মারাগেছে আরো বেশ কয়েকজন।
গত কয়েকদিন থেকে করোনা শনাক্তের হার ৫০ ভাগের উপরে থাকলেও আজ তা নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে। এদিকে নাটোরে করোনার চিকিৎসার নানা সমস্যা ও আইসিইউ সিসিইউ না থাকায় ক্ষোভ স্থানীয়দের। তারা বলেন, রাজশাহী মেডিকেলে পিসিআর ল্যাবে নাটোরের অনেক নমুনা পড়ে রয়েছে। সঠিকভাবে করোনা শনাক্তের হার পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। তারা দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে নাটোরে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি জানান।
এদিকে সদর হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত রোগীর শয্যা নিয়েও সংকট দেখা দিয়েছে। সদর হাসপাতালে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড রোগীর জন্য ৩১ আসন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ৩৯ রোগী ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আসনের অতিরিক্ত এবং মুমুর্ষ রোগীদের রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। এদিকে নাটোরে করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এ সংকট উত্তরনে অবশেষে নাটোর সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। আজ রবিবার সকালে এই ইউনিটের বর্ধিত শয্যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। একই সাথে সংসদ সদস্য শিমুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ কমিটি প্রদত্ত তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ অন্যান্য কোভিড-১৯ চিকিৎসা সামগ্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেন।
অপরদিকে করোনা সংক্রমন রোধে বুধবার থেকে শুরু হওয়া নাটোর ও সিংড়া পৌর এলাকায় ঘোষিত লকডাউনের ৫ম দিনেও শক্ত অবস্থান নিয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের একাধিক মোবাইল টিমও কাজ করছে। লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০ জনকে জরিমানা করেছে মোবাইল কোর্ট।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জনগনকে প্রতিনিয়ত সচেতন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মানুষকে মাস্ক পরিধান করে চলাচল করা সহ লকডাউনের বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে মাইকে প্রচারনা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এই বৈশ্বিক মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সকলকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে ঘরে থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। লকডাউনের বিধি মেনে সকলকে চলাচল করার আহ্বান জানান তিনি।