নাটোর নিউজ : দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকা ও সংবাদ ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলে নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের দুইটি বাড়ি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। এ নিয়ে শহরে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাংসদ শিমুলের অনুসারীরা।
শুক্রবার (২৮ মে) রাতে সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর একটি অনুসন্ধানী অনুষ্ঠানে কানাডার টরেন্টোর স্কারবোরোতে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নামে একটি ডুপ্লেক্স বাসভবন ও নাটোরের কান্দিভিটুয়ায় ‘জান্নাতি প্যালেস’ নামের আরেকটি বাসভবন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। শনিবার প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক সমকালেও একই সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রতিবেদন দুটিতে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের দুটি বাড়ির ক্রয় ও নির্মাণে অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এদিকে, ‘স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি করেছেন শফিকুল ইসলাম শিমুল’ শিরোনামে শনিবার সমকাল পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত সংবাদটি নাটোর শহরের নিয়মিত পাঠকরা পড়তে পারেননি। এদিন সকালে কোন হকার পত্রিকাটি পাঠককে দিতে পারেননি। পত্রিকা এজেন্সির কাছে এসেও কোন কপি পাননি পাঠকরা। পাঠকের প্রশ্নের উত্তরে এজেন্সির লোকজন জানিয়েছে ‘সমকাল আজ নেই’।
হঠাৎ করেই সাংসদ শিমুলের নামে এমন প্রতিবেদনকে ‘ষড়যন্ত্র ও বিদ্বেষপ্রসূত’ হিসেবে দাবি করেছেন তার অনুসারীরা। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোন দলীয় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাংসদ শিমুলের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ কর্মী ও ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান সেন্টু ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “বিগত এক যুগে এমপি মন্ত্রী হয়ে ডানে বামে ফকির হতে হাজার কোটি টাকার মালিকদের বাদ দিয়ে হঠাৎ এমপি শিমুলের বাড়ির দিকে নজর পড়লো যিনি জন্মসূত্রে সম্পদশালী পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। তার এরকম ১০টা বাড়ি থাকা স্বাভাবিক। শফিকুল ইসলাম শিমূল এমপি হঠাৎ করে ওঠে আসেনি বরং বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশ পালন করছেন।
” কাফুরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিবুল ইসলাম লিখেছেন,”রাজনৈতিক ভাবে ফায়দা লুটতে না পেরে নানা রকম ভাবে এমপি শিমুল ভাইয়ের বিরুদ্ধে লেগে আছে যাদের কাজই হলো বিরোধীতা করা। প্রিয় নেতা শিমুল ভাইয়ের রাজনৈতিক মেধা সাংগঠনিক দূরদর্শিতার কারণে কোনো ভাবেই যখন তাকে টলানো যাচ্ছে না অর্থাৎ একটি শ্রেণী যখন ফায়দা লুটতে ব্যার্থ তখনই তারা আশ্রয় নিলো মিথ্যার।” আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা প্রকাশিত সংবাদের জন্য চ্যানেল ২৪ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ম্যাক্স নামের এক নৃত্যশিল্পি লিখেছেন, “আসলে নাটোরে কোনো অশান্তি মারামারি রাহাজানি ছিনতাই ধর্ষণ কিছু হচ্ছে না তাই কিছু নাটোরের মানুষের মধ্যে অনেক ছাগল জন্ম নিয়েছে যেসব ছাগল নিজেও কিছু করতে পারে না অন্যের কিছু করা দেখলে তাদের শিহরণে উঠে যতই লাফান কোন লাভ নেই নাটোরের শিল্পীরাও আছে শিমুল ভাইয়ের সঙ্গে। শফিকুল ইসলাম শিমুল একজন আস্থাভাজন অভিভাবক এবং বটবৃক্ষ যিনি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নাটোরকে আজ উন্নয়ন এবং শান্তির রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
” জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নাসিম-ই-গুলশান সীমা লিখেছেন, “নাটোরের গণমানুষের নেতা আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম শিমুল একজন অত্যন্ত দক্ষ ও পরিশ্রমী সংগঠক এবং অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। যার হাত ধরে নাটোরে আজকে উন্নয়ন দৃশ্যমান তার বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি পাশাপাশি চ্যানেল ২৪ আজ থেকে নাটোরবাসীর কাছে একটা আবর্জনা। ঐ হলুদ সাংবাদিকের কঠোর বিচার দাবি করছি যে হাজার হাজার নাটোর বাসীর মনকে আজ ক্ষতবিক্ষত করেছে।
” সংসদ সদস্য শিমুলকে নিয়ে প্রকাশিত ও প্রচারিত প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্যবার পঠিত ও প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মন্তব্যও করেছেন বিএনপির কোন কোন নেতা। বিএনপির জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহিদুল ইসলাম বাচ্চু শনিবার সমকাল পত্রিকা না পাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে লিখেন, “হঠাৎই নাটোরে সমকালে গ্রাহক বৃদ্ধি?”
এদিকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের পদস্থ কয়েকজন নেতার সাথে এ প্রসঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের কেউ এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। প্রতিবেদন বিষয়ে এখনও আওয়ামী লীগের দলীয় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘দলের ভেতরে কতিপয় নেতার যোগসাজশ ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার করা হয়েছে। আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে চলেছি। পুরো বিষয়টি দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করেছি৷ প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করবো। আমার যাবতীয় সম্পদ স্বচ্ছতার সাথে অর্জন করা। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’
সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাটোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বছর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে পুনারায় নির্বাচিন হন।