হারুন চৌধুরী, নওগাঁ : গ্রামীন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ বেশ কিছু লক্ষ নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে যাত্রা শুরু করে ‘কেয়া আরহাম’ নামে ফাউন্ডেশন। কিন্তু শুরুর পরপরই করোনা মহামারি শুরু হয় বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে। এতে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোরমত মূল কাজে কিছুটা স্থবিরতা আসে প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু তারা দমে যায়নি। নিজস্ব কাজের গন্ডি ছাড়িয়ে করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে কাজ শুরু করে তারা।
তথ্যে জানাযায়, যাত্রা শুরুর পর থেকে সমাজের বঞ্চিত নারী, হিজড়া ও শিশুদের নিয়ে আলাদা পরিসরে কাজ শুরু করে কেয়া আরহাম ফাউন্ডেশন। শিশু সুরক্ষায় তাদের দৃষ্টি ছিলো তিখ্ন। ২০২১ সালের জুলাই মাসে ২৫০টি শিশুর মাঝে বেবিফুড ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। যাতে ওইসব বাচ্চা নিরাপদে বিদ্যালয়ে যাতায়াত ও পড়াশুনা করতে পারে। বাচ্চাদের শেখানো হয় হাত ধোয়া থেকে শুরু করে কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা যায় তার কৌশল।
গেলো এপ্রিল গ্রামের অসহায় ও মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিরতণ করা হয়। যেগুলোর মধ্যে নতুন পোশাক ছাড়াও সেমাই, চিনি ও দুধ দেয়া হয়। যা পেয়ে স্থানীয় অসহায় মানুষজন ঈদের আনন্দ ঠিকঠাকমত উপভোগ করতে পারেন।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কেয়া আরহামের অবদান সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি বড় পরিসরে প্রায় ৪’শ জন মানুষের মাঝে ফলজ ও ঔষধি গাছ বিতরন করা হয়। শুধু তাই নয়; ওই দিনই বৃক্ষ রোপনের প্রয়োজনীয়তা ও গাছের যত্ন করার পদ্ধতিও শিখানো হয় ওইসব মানুষদের।
প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে করোনাকালীন সময়ে। কখনও খাদ্য সহায়তা আবার কখনও করোনা সামগ্রী নিয়ে সাধারনের পাশে দাঁড়িয়েছিলো তারা। তবে কেবল নামমাত্র সহায়তা দিয়েই চুপ থাকেনি প্রতিষ্ঠানটি। মানবিকতার দিক বিবেচনায় বহু পরিবারকে নিয়মিত খাদ্য সাহায়তাও প্রদান করেন তারা।
এসব কাজের জন্য দিনে দিনে ‘কেয়া আরহাম’ নামটি প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বেশি কিছু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সত্যিকারের বন্ধুকে যেমন সব সময় পাশে পাওয়াযায়; ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠনটিও সুখে-দুখে পাশে থাকে মানুষের। এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় বেশ কিছু উপকারভোগীর সাথে।
নওগাঁ শহরের পাওনওগাঁ মহল্লার মনিরুল ইসলাম নামে এক হিজড়া জানান, সম্প্রতি চরম অর্থ সংকটে পড়েন তিনি। কেয়া আরহাম ফাউন্ডেশন তাকে এককালীন অর্থ সহায়তা প্রদান সহ খাবার ও কাপড় দিয়ে সহযোগীতা করে। এমন সহযোগীতা পাওয়াযাবে এটা কখনও ভাবেন নি তিনি।
একটা সময় মাদকাসক্ত হয়ে ভূল পথে চলেযান এনায়েতপুর গ্রামের যুবক মেহেদী হাসান। ঠিক সেই সময় তাকে সুপথে ফেরাতে বড় ভূমিকা রাখে এই ফাউন্ডেশন। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। পাশাপাশি ভালো পরামর্শ দিয়ে তাকে সুপথে ফেরানো হয়। মেহেদী বলেন, এই ফাউন্ডেশন পাশে না দাঁড়ালে বিপথে চলেযেতেন তিনি।
পার বোয়ালিয়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী বাঁধন হোসেন। কথা বলতে পারেন না তিনি। বর্তমানে বাঁধনের সকল খরচ বহন করছে ফাউন্ডেশন।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নূর তাজ বলেন, এই প্রতিষ্ঠান কেবল নির্ধারিত কাজ কিংবা দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবদান রেখে চলেছে কেয়া আরহাম ফাউন্ডেশন। দায়িত্বকে ঈবাদত ভেবেই কাজ করে এখানকার প্রতিটি কর্মকর্তা কর্মচারী।
শুরু থেকেই ‘কেয়া আরহাম ফাউন্ডেশন’র চেয়াম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন লায়লা আরজুমান কেয়া। তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই পরিশ্রমের মাধ্যমে তিলে তিলে এই প্রতিষ্ঠনকে গড়ে তুলা হয়েছে। সময়ের সাথে বাড়ছে কাজের পরিধিও। জানান, সাধারণ মানুষদের নিয়ে কাজ করার মধ্যে সীমাহীন আনন্দ আছে। প্রতিষ্ঠানটি সবসময় বিদেশি ফান্ডের আশায় বসে না থেকে সুযোগ পেলেই সাধারণ মানুষের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে তারা। এসব কাজে অফিসের সাধারণ সম্পাদক লতিফুল আলম সহ অন্যান্য সহকর্মীদের সহযোগীতা প্রতিষ্ঠানকে করেছে আরও গতিশীল। আগামীতে বড় পরিসরে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশা ব্যাক্ত করেন ‘কেয়া আরহাম ফাউন্ডেশন’র চেয়াম্যান লায়লা আরজুমান কেয়া।