নাটোর নিউজ লালপুর: নাটোরের লালপুরে নিজ জমিতে নির্মানাধীন বাড়ীর কাজ করতে গিয়ে খুনের হুমকি ও আক্রমণের শিকার হয়েছেন ভুক্তভোগী তানিয়া বেগম নামে এক নারী। উপজেলার কদিমচিলান ইউপির নাওদাঁড়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ঐ নারী নাওদাঁড়া গ্রামের হিল্লালুর রহমান হেলাল এর স্ত্রী।
শুক্রবার (১০জুন) সকালে সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান, নাওদাঁড়া-১৭৭ নং মৌজায় আরএস ২৫১নং খতিয়ানভুক্ত ২৮৪ দাগে পৈত্রিক সূত্রে ২০ শতাংশের মধ্যে ২.৮৬ শতাংশের বৈধ মালিক হিল্লালুর, যা তার শিশু পুত্র আব্দুল আল সাকিন (৭) এর নামে রেজিষ্ট্রিকৃত। জমির মালিক নাবালক হওয়ায় অভিভাবক হিসেবে তার মা তানিয়া বেগম জমির ভোগদখল ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে। ঐ জমিতে তারা ২.৩৩ শতাংশের উপর বাড়ী নির্মাণের কাজ শুরু করে এবং তা ফাউন্ডেশন, ছাদ ঢালাইসহ গাথুনির কাজ শেষ হয়। কিন্তু হিল্লালুর এর ভাই শুকুর আলী ও তার পরিবার উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বাড়ীর কাজে বাধা দেয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে।
জীবনের নিরাপত্তা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতায় হিল্লালুর এর স্ত্রী তানিয়া বেগম বাদী হয়ে গত ১৩/১২/২১ইং তারিখে হিল্লালুরের সহধর ভাই শুকুর আলী, তার দুই ছেলে মো: মিন্টু, আল আমীন হোসেন ও স্ত্রী মোছা ভানু বেগম এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-৩১৬/২১। আলাদত উভয় পক্ষের শান্তি বজায় রাখতে একই তারিখে যার যার দখলকৃত সম্পদের উপর স্থিতিবস্থা জারি করেন। পরে গত ১৫/৩/২২ তারিখে তানিয়া বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তার দখলকৃত সম্পত্তিতে যেকোন কাজকর্ম ও ভোগ দখলে অনুমতি দেন এবং তাতে বাধা না দিতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
আদালতের আদেশ লালপুর থানা প্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ নোটিশ ঝোলায়, ঐ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে শুকুর আলীসহ কয়েকজন তানিয়া’র পরিবারের উপর আক্রমণ করে। এঘটনায় ওয়ালিয়া পুলিশ ফাঁড়ীর এসআই মেহেদী হাসান বিবাদীদের বিরুদ্ধে ১০৭ ধারায় মুচলেকার আওতায় আনার জন্য আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে গত ০৫/০৬/২২ তারিখে বিবাদীগন আর কোন আইন লংঘন করবে না মর্মে একবছর মেয়াদী দশ হাজার টাকার বন্ডে স্বাক্ষর করে আদালতে মুচলেকা দিয়ে আসে। কিন্তু শুক্রবার সকালে বাদী তার নির্মাধীণ বাড়ীর কাজ করতে গেলে শুকুর আলীসহ কয়েকজন তানিয়া বেগম ও হিল্লালুর এর উপর চড়াও হয়। এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারন করতে গেলে ভিডিও ধারনে বাধা দেয়।
এবিষয়ে তানিয়া বেগম বলেন- আমার স্বামী এই জমির বৈধ মালিক। যা আমার শিশু সন্তানের নামে রেজিষ্ট্রি করা আছে। আমরা এখানে বাড়ী নির্মাণ করছি। কিন্তু শুকুর আলী আমাদের ১০শতাংশ জমিসহ পুরাতন বাড়ীটি সম্পূর্ণ দাবি করে, আমরা রাজি না হয়ে তাদের অংশ মোতাবেক বিনামূল্যে চারটি কক্ষসহ ৫শতাংশ জমি ছেড়ে দিয়েছি। বর্তমানে প্রাচীর দিয়ে বেষ্টনি করা আছে। তারা সেটা না মেনে সম্পূর্ণ বাড়ী দখলের নীল নকশায় উদ্দেশ্যে প্রনোদিত ভাবে জোর পূর্বক আমার নতুন বাড়ীর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি আদালতের দ্বারস্থ হলে, বিজ্ঞ আদালত আমাকে সার্বিক কাজের অনুমতি দিয়েছে। তার পরেও তারা বাড়ীর কাজে বাধা দিচ্ছে এবং আমার স্বামী সন্তানসহ আমাকে নিয়মিত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এসময় তানিয়া বেগম প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন।
এ বিষয়ে শুকুর আলী বলেন, তানিয়া যদি ডিক্রি পায় তবে আমাদের কোন বিষয়ে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু কাজের শুরুতে বাধা না শেষে বাধা দিলেন কেন? জানতে চাইলে, তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ঘটনায় ওয়ালিয়া পুলিশ ফাঁড়ীর এসআই মেহেদী হাসান জানান, তানিয়া বেগমের মামলার প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত তার পক্ষে দুইটা ডিক্রি দিয়েছে, সরেজমিনে গিয়ে আদালতের নির্দেশ উভয় পক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু গত ১৫-৩-২২ তারিখে বিবাদীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরপ হলে পুলিশের সামনে শুকুর আলী ও তার পরিবার তানিয়া বেগমসহ তার পরিবারের উপর আক্রমণ করে। এহেন অবস্থায় আদালত অবমাননা ও তানিয়ার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ১০৭ ধারায় বিবাদীদের মুচলেকার আওতায় আনার জন্য প্রতিবেদন দাখিল করেছি। তারা বন্ডে মুচলেকা দিয়েছেন। আদালত অবমাননা করলে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।