নাটোর
সারা দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের এ নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলার পৌর শহরে অবস্থিত দুটি অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । গত শনিবার বিকেলে প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালাতে গিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ পান। মালিকদের কাউকে খুঁজে না পাওয়ায় তারা চলে যায় ।প্রশাসনের লোকজন যাওয়ার পর দুটি প্রতিষ্ঠানই তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়েছে ।অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান দুটো হলো চলনবিল ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং আনোয়ার হোসেন চক্ষু হাসপাতাল ।
স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন অসংখ্য রোগীর আসে স্বাস্থ্যসেবা নিতে। ভর্তি রোগীর সংখ্যাও অনেক। অভিযান হবে, এ তথ্য আগে থেকে জানা ছিল তাদের । শনিবার দুপুরে তড়িঘড়ি করে রোগীদের বের করে দিয়ে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে চলে যান কর্তৃপক্ষ। তাদের তালার ওপর আরও একটি তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করার নিয়ম থাকলেই অভিযানকারী দল তা করেননি । ফলে তারা চলে যাওয়ার পর আবারো কার্যক্রম শুরু করে ।যা রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ।
সরকারী হাসপাতালে কর্মরত দুইজন চিকিৎসক ও প্রভাবশালীদের মালিকানা হওয়ায় তারা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়েছে । এ ব্যাপারে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আমিনুল ইসলামকে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেয়নি । ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল বন্ধের সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা ।
নামপ্রকাশে অনইচ্ছুক ক্লিনিক ও ডায়াগণাষ্টিক সেন্টারের মালিকরা জানান,উনারা সিলগালা চাইলেই করতে পারত কিন্তু করেনি সম্ভবত সুযোগ দিয়েছে ।যেখানে পুরো বাংলাদেশ এ এরকম অবৈধ প্রতিষ্ঠান বিনা বাক্য ব্যয়ে সিলগালা করা হয়েছে । সেখানে এরা পার পাই কিভাবে ?
চলনবিল ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অংশীদার রাকিব হোসেন জানান,আমরা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য খুলেছিলাম। রোগী দেখিনি ।আজ সোমবার সিভিল সার্জন ভিজিটে আসবেন তাই খোলা রাখা হয়েছিল। আমাদেও অনুমোদনের সব প্রক্রিয়া স¤পন্ন হয়ে আছে। শুধু করোনার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদনটি স¤পন্ন করা যায়নি।
এলাকাবাসী বলেন,চলনবিলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পর থেকে সিংড়ায় একের পর এক ক্লিনিক আর ডায়াগণাষ্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে ।দিনের পর দিন তারা চিকিৎসা নামে অপচিকিৎসা চালাচ্ছে । আর স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী এদের বৈধধতা দিচ্ছে । তাদের সহযোগিতার কারণে ঘোষিত ৭২ ঘন্টার পেরিয়ে যাওয়ার পরও অবৈধ দুটি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়নি ।উল্টো তাদের প্রতিষ্ঠান বৈধতা দেওয়ার জন্য সিভিল সার্জন পরিদর্শনে আসছেন । স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ না মানায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত ।
সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আমিনুল ইসলাম জানান, আমি অভিযোগ পেয়ে তাদের ডেকেছিলাম । তারা জানিয়েছে ,আজ সিভিল সার্জন ভিজিটে আসবে বলে তারা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছে। রোগী দেখে নাই । যেহেতু দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে তাই সিলগালা করা হয়নি । কেউ অভিযোগ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে । এখনো প্রতিষ্ঠান দুটি সিলগালা করা হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন ।
নাটোরের সিভিল সার্জন রোজি আরা জানান, প্রতিষ্ঠান দুটো সিলগালা করা হয়নি এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ পাওয়ার পর আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তাকে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কেন তিনি ব্যবস্থা নিলেন না বিষয়টি আমি দেখছি ।অনুমোদন
নেই, এমন কোনো প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম চালিয়ে রাখার আর সুযোগ দেওয়া হবে না। তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দেওয়া হচ্ছে। অনুমোদন নিয়ে আসতে পারলে তবেই তালা খোলা হবে, এর আগে নয়।