নাটোর নিউজ: আগামী ২০ ফেব্রুয়ারী নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি সম্বলিত জাতীয় নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শহরের কানাইখালী প্রেসক্লাবের ছাদে টানানো আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এর শুভেচ্ছা ব্যানার খুলে ফেলার অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান এহিয়া চৌধুরী বিরুদ্ধে । এই বিষয়টি নিয়ে শহরে আওয়ামী লীগ একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে । তবে যুবলীগ সভাপতি দাবী করেছে , প্রতিমন্ত্রীর ব্যানারটি খোলার বা মারপিটের কোন ঘটনায় ঘটেনি । বুধবার (১৬ ফেব্র“য়ারী) শহরের কানাইখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষ্যে দলটির কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দকে নাটোরে স্বাগত জানিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ পলকের একটি ব্যানার নামানোর অভিযোগ উঠেছে জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কানাইখালী এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশের মধ্যস্থাতায় ওই ব্যানার পুনঃস্থাপন করার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিকে, প্রতিমন্ত্রী পলকের ব্যানার সরানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভাইরাল হওয়ার পর জেলা জুড়ে নিন্দা ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ জানান, বুধবার সকালে জেলা যুবলীগের সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার কয়েকজন সমর্থক হকার্স মার্কেট সংলগ্ন নাটোর প্রেসক্লাব ভবনের ছাদে অবস্থিত বিলবোর্ডে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রিয় নেতাদের ছবি সম্বলিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ব্যানার নামিয়ে ফেলে। এসময় নাটোর শহরে বাইরের কোন এমপির ব্যানার লাগাতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন।
ঘটনাটি জানাজানি হলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, সৈয়দ মোর্তুজা আলী বাবলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন সহ বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কানাইখালী এলাকায় অবস্থান নেন। এসময় তারা বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যানারটি পুনঃস্থাপন করা হয়।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আযম স্বপন জানান, আগামী ২০শে ফেব্রুয়ারী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও ২৭ ফেব্র“য়ারী বাংলাদেশ-ভারত কালচারাল মিটের উদ্দেশ্যে দুই দেশের মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পিদের স্বাগত জানিয়ে স্থাপিত ব্যানারটি খুলে ফেলতে দেখে স্থানীয়রা আমাদের খবর দেয়। আমরা এসে দেখি সেটি খুলে নেয়া হয়েছে। অথচ দুই দিন আগে কালচারাল মিটের আহ্বায়ক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির থেকে ওই বিলবোর্ডটি ভাড়া নেন এবং ২০ তারিখ পর্যন্ত সম্মেলনের ব্যানার প্রদর্শনের জন্য ভাড়ার অর্ধেক টাকা অগ্রীম পরিশোধ করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের নির্দেশে তার ঘনিষ্ঠজন বাসিরুর রহমান খান এহিয়া চৌধুরী এই ব্যানার অপসারণ করিয়েছেন। জুনাইদ আহমেদ পলক সিংড়া আসনের সাংসদ হওয়ায় নাটোর শহরে কখনও কোন ব্যানার স্থাপন করেন না। সম্মেলন উপলক্ষে তিনি ব্যানার স্থাপন করার অধিকার রাখেন। তার এ অধিকার খর্ব করা হয়েছে। সাংসদ শিমুলের লোকজন সম্মেলনের শান্তিপুর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। কেউ বিশৃংঙ্খলা করার চেস্টা করলে তাকে উচিত জবাব দেওয়া হবে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনায় ঘটেনি । সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পরিবেশ ঘলাটে করার জন্য এ কাহিনী সাজানো হয়েছে । এটা যে মিথ্যা তাঁর প্রমাণ ফেসবুকে ছাড়া ভিডিওটি । সেখানে ব্যানার নামানো দেখানে হচ্ছে । কারা নামাচ্ছে সেটা দেখাক তাহলে পরিস্কার দেখা যাবে । এ থরণের বানোয়াট অভিযোগ দুঃখজনক ।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাঁকজমকপূর্ণ কালচারাল মিট ও শান্তিপূর্ণ সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার নামানোর ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আইসিটি ডিভিশন চুক্তি ও ভাড়া পরিশোধ করেই ব্যানার স্থাপন করেছে। সেখানে গায়ের জোরে এই ব্যানার নামিয়ে তিনি অপরাধ করেছেন। আশা করছি জেলা আওয়ামী লীগ এই ঘটনার জন্য যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কাছে কৈফিয়ত তলব করবে এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ব্যানার নামানোর ঘটনা জানার পর পুলিশের সহযোগিতায় তা আবার পুনস্থাপন করা হয়েছে। পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সে লক্ষ্যে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, আমি প্রতিমন্ত্রী পলকের ব্যানার নামানোর নির্দেশ দিইনি। বরং যখন শুনেছি তাঁর ব্যানার কে বা কারা নামিয়েছে, তখন পুলিশকে জানিয়ে তা আবার পুনঃস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছি।