নাটোর নিউজ: নাটোর সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মীম আক্তার (২১) নামে এক নারীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে ৫ ঘন্টার মধ্যেই ঘাতক সাবেক স্বামী মোঃ রাজু (২৫)কে এক সহযোগীসহ গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।এ নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনার ৫ ঘন্টার মধ্যে রক্তমাখা পোষাক পরিহিত অবস্থায় ঘাতকদের গ্রেফতার করায় নিহতের পরিবার ও সাধারণ মানুষের প্রশংসায় ভাসছে নাটোর সদর থানা পুলিশ।
জানা গেছে,স্বামীর নির্যাতনে তালাক দিয়েও প্রাণে বাঁচতে পারলেন না নাটোর সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মীম আক্তার (২১) নামে এক নারী।বাবার বাড়িতেই তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে সাবেক স্বামী রাজু। বোনকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন মনিষা (১৪)। আজ ২৯ জানুয়ারি শনিবার সকাল দশটার দিকে নাটোর সদরের হালসা ইউনিয়নে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মিম আক্তার একই এলাকার আব্দুল মমিনের মেয়ে। অভিযুক্ত রাজু প্রামানিক শহরের বড়গাছা বুড়াদরগা এলাকার সুজন প্রামানিকের ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, রাজুর সাথে বছর পাঁচেক আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় মিমের। বিয়ের পর থেকে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো তাকে । রাইসা নামে তাদের চার বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মেয়েটিকে স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচাতে ৪ মাস আগে তালাক দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন মা চামেলি বেগম।মেয়ের ও নাতনির খরচ চালাতে টিএমএসএস কলেজে এ চাকরি শুরু করেন তিনি। তালাক দেওয়ার এক মাসের মাথায় সাথী নামের এক নারীকে বিয়ে করে ঘাতক রাজু । ইতিমধ্যে মিমের বড় দুলাভাই আঃ হান্নান তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে । এ খবর জানার পর মিমকে দুটি মুঠোফোন নম্বর থেকে অন্যত্র বিয়ে করলে প্রানে মেরে ফেলবে বলে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল সাবেক স্বামী রাজু । চামেলি বেগম কর্মস্থলে থাকায় শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে মেয়েটির সাবেক স্বামী রাজু তার এক সহযোগীকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে দ্রুত নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও,সি)মনসুর আহমদ ঘটনাস্থল সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জনৈক মমিনের বাড়িতে যায়। সেখানে মমিনের মেয়ে মিম আক্তারকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় দেখে দ্রুত তাদের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীমকে মৃত ঘোষণা করে। মেয়েকে বাঁচাতে না পারায় মা চামেলি বেগমের আহাজারিতে নাটোর সদর হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
নিহত মীমের ছোট বোন মনিষা খাতুন বলেন, চোখের সামনে বড় বোনের ওপর হামলা হতে দেখেছি, বোনকে বাঁচাতে পারেননি। রাজু ও তার সহযোগী বোনকে ছুরিকাঘাত করার সময় এগিয়ে গেলে হেলমেট দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি হাতে ছুরিকাঘাত করে আমাকে। পরে হামলাকারীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় ।
মারা যাওয়ার পরপরই নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য নাটোর সদর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।পুলিশ সুপারের নির্দেশ পেয়েই সাথে সাথে সদর থানা অফিসার ইনচার্জ মনসুর রহমান এবং ওসি (তদন্ত) আবু সাদাদ এর নেতৃত্বে পুলিশের একাদিক টিম আসামীদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে। শনিবার বিকলি ৩ টায় জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বামিহাল এলাকা থেকে রক্তমাখা পোষাক পরিহিত অবস্থায় ঘাতক রাজু এবং তার সহযোগী শহরের দক্ষিণ বড়গাছা এলাকার রতন আলীর ছেলে তানজিম (১৬)কে আটক করে ।
নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনসুর আহমদ জানান,ঐ নারীকে উপর্যপরী বুকে এবং তলপেটে ছুরিকাঘাত করে নির্মম এ খুনের ঘটনায় পুলিশ সুপারের কঠোর নির্দেশ পেয়ে দুই ঘন্টার মধ্যে খুনের সাথে জড়িত দুই আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিমকে হত্যার কথা শিকার করেন।লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে । নিহত মিমের মা বাদী হয়ে আটক দুইজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে ।
এদিকে মীমকে বাঁচতে না দেওয়ার এই নির্মমতা মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী। হত্যাকান্ডের ৫ ঘন্টার মধ্যে ঘাতকদের আটক করায় পুলিশের ভূয়সী প্রশাংসা করেছেন । পাশাপাশি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন তারা।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, অভিযুক্ত দুই জনকে আটক করা হয়েছে । আটককৃতদের ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । আদালতের মাধ্যমে আসামীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।