লুঙ্গি, আমাদের সংস্কৃতি ও বর্তমান বিতর্ক – স্বকৃত নোমান
প্যান্ট এই জনপদের পোশাক ছিল না। ইংরেজদের মাধ্যমে এই পোশাক ঢুকেছে এই ভূখণ্ডে। লুঙ্গিও আমাদের পোশাক ছিল না। কালের বিবর্তনে বস্ত্রটি এখন বাংলা-ভারতের সংস্কৃতির অংশ। সংস্কৃতি সততই পরিবর্তনশীল। নদীর মতো। পরিবর্তনই তার ধর্ম।
পোশাক হিসেবে লুঙ্গিকে কেউ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়নি। পরতে বাধ্য করেনি। স্বতস্ফ‚র্তভাবে এই পোশাক আমাদের সংস্কৃতিতে ঢুকেছে। লুঙ্গি কেবল পুরুষরাই পরে না, পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীরা ‘থামি’ নামে যে পোশাক, পরে, তা লুঙ্গির মতোই। বাংলাদেশ-ভারতের নারীরা যে ‘সায়া’ পরে, তা-ও লুঙ্গিরই মতো।
হিমালয় অববাহিকার এই বিস্তীর্ণ জনপদে পোশাক হিসেবে লুঙ্গির উপযোগীতা রয়েছে। জমিনে চাষাবাদের সময় কৃষককে লুঙ্গি না পরলে চলে না। প্যান্ট পরে চাষাবাদ করতে কৃষক ঠিক সুবিধা করে উঠতে পারে না। খাল-বিল নদ-নদী পারাপারের সময় লুঙ্গি পরা থাকলে মালকোচা মেরে সহজে পার হওয়া যায়।
শ্রদ্ধেয় তসলিমা নাসরিন, আপনি যখন লুঙ্গিকে অশ্লীল বলছেন, তখন আপনি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে অশ্লীল বলছেন। ম্রো বা মুরং জনগোষ্ঠীর নারীরা তো বলতে গেলে পোশাকই পরে না। ‘পিনন’ নামে যে বস্ত্রখণ্ডটি পরে, তাতে তাদের শরীর স্পষ্ট দেখা যায়। পোষাকটিকে আপনি কি অশ্লীল বলবেন?
লুঙ্গি পরে কেউ যদি তার বিশেষ অঙ্গটি চুলকায়, তবে তা অভ্যাশবশত চুলকায়। তাতে লুঙ্গির দোষ দেওয়া চলে না। যে চুলকাবে, সেক্স সবসময় যার মাথায় থাকে, সে ট্রাউজার পরেও চুলকাবে, প্যান্ট পরেও চুলকাবে, ধুতি পরেও চুলকাবে, গামছা পরেও চুলকাবে।
মহাকালে রেখাপাত
৩০.০১.২০২২