Homeমুক্তমত'রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও কাণ্ডজ্ঞানহীন উপাচার্য, এই দশার পরিবর্তন জরুরি'- স্বকৃত নোমান

‘রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও কাণ্ডজ্ঞানহীন উপাচার্য, এই দশার পরিবর্তন জরুরি’- স্বকৃত নোমান

‘রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ও কাণ্ডজ্ঞানহীন উপাচার্য, এই দশার পরিবর্তন জরুরি’-
স্বকৃত নোমান

আচার্য তিনি, যিনি জ্ঞানকাণ্ডের সব কটি শাখায় পারদর্শী হবেন, যাঁর মনীষা ছড়িয়ে পড়বে দিগ্বিদিক। যেমন দ্রোনাচার্য; যিনি ছিলেন সর্ববিদ্যা বিশারদ। জ্ঞানকাণ্ডের কোনো একটি বা একাধিক শাখায় বিশেষ অবদান রেখেও আচার্য হয়ে ওঠা সম্ভব। যেমন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, যিনি ছিলেন একাধারে রসায়নবিদ, শিক্ষক, কবি ও দার্শনিক।

পদ বিন্যাসে আচার্যের সমকক্ষ নন উপাচার্য। তাই বলে জ্ঞানকাণ্ডে তাঁর পারদর্শিতা কম হলে চলে না, তাঁর মনীষার ঔজ্জ্বল্য কম হলে চলে না। কেননা আচার্যের অনপুস্থিতিতে তিনিই আচার্য। আচার্যের কার্য সম্পাদন করার দায়িত্ব তাঁরই।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য পদটি রাষ্ট্রপতির। এই নিয়ম পৃথিবীর আর কোন কোন দেশে আছে ঠিক জানা নেই। এমনটা হওয়া উচিত ছিল না। রাষ্ট্রপ্রধান কী কারণে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, সভাপতি বা আচার্য হবেন? রাজনীতি সব কিছুর নিয়ন্তা এটা সত্য। শিক্ষারও নিয়ন্তা। হলেও, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদটি তাঁর জন্য বেমানান। আচার্য তো হবেন একজন মনীষী, যিনি সর্ববিদ্যা বিশারদ, যাঁর মনীষার বিচ্ছুরণে সমাজ, রাষ্ট্র উজ্জ্বল হয়।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ উপাচার্য স্রেফ সার্টিফিকেটধারী, সর্ববিদ্যায় যাদের কোনো পারদর্শিতা নেই, যাদের কোনো মনীষা নেই। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদেরকেই উপাচর্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যারা রাজানুকূল্য প্রত্যাশী, রাজানুকূল্য পাওয়ার জন্য যারা চাটুকারিতা, মিথ্যাচার, দুর্নীতি, তৈলমর্দন থেকে শুরু করে হেন কাজ নেই যা করতে পারে না।

উপাচার্য পলিটিক্যালি নিয়োগ দেওয়া দোষণীয় কিছু নয়। কিন্তু মর্মান্তিকভাবে আমাদের রাজনীতিকরা, আমলারা উপাচার্য নিয়োগের জন্য সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারেন না, সঠিক মানুষটিকে চিনতে পারেন না। সে কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ভুল মানুষটিকে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে বসেন। যেমন স্বাধীনতা পদক দিয়ে বসেছিলেন রইসউদ্দিন নামক জনৈক আমলাকে।

হ্যাঁ, ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলোর উপাচার্য সত্যিকারার্থেই মনীষী, যোগ্য, শিক্ষাবিদ। সর্ববিদ্যা বিশারদ না হলেও জ্ঞানকাণ্ডের কোনো একটি শাখায় তাঁদের বিশেষ অবদান রয়েছে।

শাবিপ্রবির ভিসি ফরিদ উদ্দীনের নাম দেশের বিদ্বৎসমাজের অনেকে জানত না। চলমান ঘটনায় জানল। শিক্ষায় তার কী অবদান? জানা নেই। সহিত্য, সংস্কৃতি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল, রসায়ণ…জ্ঞানকাণ্ডের কোন শাখায় তার অবদান? জানা নেই।

তাকে নিয়ে গল্পকার ও ভ্রমণ লেখক ফারুক মঈনউদ্দীন লিখেছেন, “এই ফরিদ উদ্দীন শাবিপ্রবির উপাচার্য হওয়ার বহু আগে বেশ কিছুদিন বনানীর বৈশাখী পার্কে প্রাতঃভ্রমণের সময় তাঁর সাথে অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাঁটতে গিয়ে বুঝতে পারিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক এরকম হালকা হবেন কেন? কোনো একাডেমিক কথা নয়, কোনো জ্ঞানের কথা নয়, আলাপের বিষয় থাকত কে কোথায় কোন পজিশনে আছেন ইত্যাদি। আমাদের বন্ধুদের মধ্যেও  কেউ কেউ আছেন এরকম, তবে তাঁরা (সৌভাগ্যবশত) উপাচার্য নন। তিনি যখন শাবিপ্রবির উপচার্য হলেন, অবাকই হয়েছিলাম। তাঁর সাথে কয়েক মিনিট কথা বললেই বোঝা যায় তিনি কী ধরনের ‘অধ্যাপক’।”

ফরিদ উদ্দীন সম্পর্কে ফারুক মঈনউদ্দীন (Faruq Mainuddin) যা লিখেছেন, তা মিথ্যা মনে করি না। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এই ফরিদ উদ্দীনের মতোই। উপাচার্য হওয়ার আগে দেশের বিদ্বৎসমাজ কখনো এদের নাম জানে না। এদের বিশেষ কোনো গবেষণাকর্ম নেই, জ্ঞানকাণ্ডের বিশেষ কোনো শাখায় অবদান নেই। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি করে এরা উপার্যের পদে আসীন হয়ে থাকেন। এদেরকে কোনোভাবেই উপাচার্য বলা যায় না। বড়জোর অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা নির্বাহী কর্মকর্তা বা পরিচালক বলা যায়; প্রশাসনিক দেখভাল করাই যাদের কাজ।

এই দশার পরিবর্তন জরুরি।

মহাকালে রেখাপাত
২৬.০১.২০২২

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments