নাটোর নিউজ: জলাশয় ভরাট করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রয়োজন, এমনটাই নির্দেশনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। প্রশাসন বলছেন শ্রেণী পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আর স্থানীয় প্রভাবশালীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জলাশয় ভরাট করে নির্মাণ করছে বহুতল ভবন। এ বিষয়ে নিউজ করেও দমানো যায়নি অবৈধ ভবন নির্মাণ কাজ। তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনের লোকজন এসে বন্ধ করে দিলেও আবার প্রচুর পরিমাণে পয়সার বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের দুইপাশে, শেরকোল বাজার থেকে ধুলাউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত দেখা যায় শত শত বসতি। এছাড়াও চোখে পড়ে নির্মাণাধীন বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কি তার নিজের সম্পত্তির খবর রাখেন না ? নাকি বিশেষ কোনো কারণে, জেনেও না জানার ভান করেন তারা ? এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারি জায়গা ও জলাশয় দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে তারা। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না। সরকারও তাকিয়ে দেখে না। টাকার বিনিময়েই প্রশাসন নীরব।
বহুতল ভবন নির্মাতা মুদি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, ‘ক্রয় সূত্রে এই জায়গার মালিক তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু জায়গা, তার ভবনের ভিতরে রয়েছে। সরকারের প্রয়োজন হলে ভবন ভেঙে দেবে।’
কোন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে এই বহুতল ভবনের প্ল্যান ? জলাশয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন ইউনিয়ন পরিষদ দিয়েছেন ? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর অথবা বৈধ অনুমতি পত্র, প্রয়োজনীয় কোন কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয় বহুতল ভবন নির্মাতা।
বহুতল ভবন নির্মাতার বড় ভাই মো. লোকমান হোসেন জানান, বেড়িবাঁধের দুইপাশের সমস্ত জায়গার মালিকানা পানি উন্নয়ন বোর্ড। তার ছোট ভাই যে ভবনটি নির্মাণ করছেন, সেই ভবনের মধ্যে ২২ ফিট জায়গার মালিক, পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা জজ কোর্টের জেনারেল প্রসিকিউটর আলহাজ্ব মো. আসাদুল ইসলাম জানান, ‘জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী কোনো পুকুর, জলাশয়, খাল, লেক ভরাট করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।’
নাটোরের সিংড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রকিবুল হাসান জানান, ‘জলাশয় ভরাটের কোনো সুযোগ নেই এ ধরনের ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ জানান, ‘শেরকলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন জায়গা কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি। কেউ যদি স্থাপনা গড়ে সেটা অবৈধ। আমরা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
একদিকে সরকারি জায়গা দখল , অন্যদিকে সরকারি নিয়ম অমান্য করে জলাশয় ভরাট ও ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন নির্মাণ, এই সমস্ত অসাধু অবৈধ দখলদারদের লাগাম এই মুহূর্তে টেনে না ধরা হলে, অদূর ভবিষ্যতে বারনই নদী হারিয়ে যাবে। সেইসাথে জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন, সচেতন মহল।