একটি জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার কাহিনী – জামিল আক্তার
মঙ্গলবার রাত্রি ৮ ঘটিকায় অফিশিয়াল প্রয়োজনে গুরুদাসপুর থানায় যাচ্ছিলাম। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের খেজুর তলা মোড়ে পৌঁছানোর পূর্বেই রাস্তায় অনেক মানুষের ভীড় দেখলাম। আমার গাড়ি দেখা মাত্রই সবাই হেল্প চাইল। এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একজন মানুষ গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে আছে। পাশেই পাবনাগামী রাজদূত পরিবহনের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এই গাড়ির সকল যাত্রী রাস্তায় বের হয়ে গেছে। কারন গাড়ির ড্রাইভার এবং হেলপার গাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে, কিছুক্ষণ আগে মোটরসাইকেল আরোহী একজন ব্যক্তির সাথে এই যাত্রীবাহী গাড়ির সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক শান্তু ভাই। তিনি জানালেন যে, যাত্রীবাহী গাড়িটিকে সাইড দিতে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী পাশ থেকে মাথায় আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তির মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। অবস্থাদৃষ্টে আঘাত প্রাণঘাতী মনে হচ্ছিল না। জীবন বাঁচানোর তাড়না থেকেই সকলের সহযোগিতা চাইলাম। সবাই মিলে আহত ব্যক্তিকে আমার গাড়ির পেছনে তুলে দিলেন। ওয়ারলেস সেটে হাইওয়ে পুলিশকে খবর দিয়ে আহত ব্যক্তিকে নিয়ে রওনা হলাম নাটোর সদর হাসপাতালে উদ্দেশ্যে।
নাটোর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেল ভাই পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিক জানালাম যেন জরুরী বিভাগে ডক্টর প্রস্তুত থাকেন। আধা ঘন্টা পরে হাসপাতালে পৌছালাম। সকলের সহযোগিতায় আহত ব্যক্তিকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার অক্সিমিটার এবং ইসিজি মেশিন দিয়ে রোগীর অবস্থা জানার চেষ্টা করলেন। এরপর আমাদের জানালেন যে, লোকটি কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন। শেষ পর্যন্ত লোকটিকে আর বাঁচানো গেল না। ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট লিখে দিলেন, দ্বিজেন (৪৫) ঠিকানা: মঠগ্রাম থানা: সিংড়া “Brought dead. RTA”
সাংবাদিক সান্তু ভাই নিউজ করার জন্য আবার ফোন দিলেন। তিনি জানালেন যে, ঘটনাটি পুরোপুরি তার চোখের সামনে ঘটেছে। লোকটা যেভাবে আঘাত পেয়েছে তাতে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় ছিল যে, তার মাথায় হেলমেট ছিল না। এই কারণে অকালে ঝরে গেল একটি জীবন। এমনিভাবে কত জীবন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গাফিলতির কারণে। হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহীর আর কোনো মৃত্যু আমরা দেখতে চাই না। আসুন আমরা সকলে সচেতন হই।
*RTA-Road Transport Accident