নাটোর নিউজ: নাটোর দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েও এক বছর পর মত বদলালো নাটোর বিএনপি। সেই সাথে বদলে গেছে বিএনপির প্রার্থীও। দলের শীর্ষ নেতাদের চাপের মুখে জমা দিয়েও মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জিল্লুর রহমান খান বাবুল চৌধুরি। তার বদলে প্রার্থী করা হয়েছে সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শেখ এমদাদুল হক আল মামুনকে। সিদ্ধান্ত ও প্রার্থী বদলের এই ঘটনায় মুখ খুলেছেন জিল্লুর রহমান খান বাবুল চৌধুরি।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন সাংবাদিকদের জানানো এক প্রতিক্রিয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বাবুল চৌধুরি বিএনপি কেন্দ্রিয় ও জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন ও দলীয় পদ বিক্রির অভিযোগ করেছেন। তার দাবী, নাটোর পৌরসভার সৌন্দর্য্যবর্ধনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অনুকূলে বিশ্বাব্যাংকের সাড়ে তিনশত কোটি টাকা বরাদ্দের লোভে প্রার্থী বদলেছে জেলা বিএনপি। সোমবার রাতে বাবুল চৌধুরির একটি বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তিনি অভিযোগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাচ্চু, সাবেক প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মেয়র প্রার্থী শেখ এমদাদুল হক আল মামুনের বিরুদ্ধে।
পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান খান বাবুল চৌধুরি বলেন, ‘সাবেক মেয়র এমদাদ কিভাবে পৌরসভা পরিচালনা করেছেন তা সবাই জানে। গত ১৪ বছর তিনি দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। বিএনপি গত ১৪ বছর চরম দুঃসময় পার করেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলার শিকার হয়েছেন। কিন্ত এমদাদ কোন মামলার আসামী নন। অথচ সক্রিয় রাজনীতি করায় আমি গাড়ি পোড়ানো, বিস্ফোরণ ও অস্ত্র আইনের মিথ্যা মামলার আসামী হয়েছি। আমি দলের মনোনয়ন পেলেও আমাকে বাদ দিয়ে এমদাদকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে বসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা বিএনপির নেতারা।’ বাবুল চৌধুরি বলেন, পুুনঃ তফশিলের পর মনোনয়ন জমা দেবার শেষ তারিখের দুদিন আগে এমদাদ তার বাড়িতে আমাকে ডেকে জানান তিনি আগামী মাসে ওমরাহ করতে দেশের বাইরে যাবেন। অথচ তিনি মনোনয়ন জমা দিলেন। এমদাদ ভোট করতে চান মেয়র হয়ে পৌরসভায় বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দের টাকার ভাগ বাটোয়ারা করার জন্য।
পৌরসভায় বরাদ্দ ৩১০ কোটি টাকা থেকে উনি ১০ পারসেন্ট টাকা নিলেও ৩১ কোটি টাকা হয়। তাই এখন দুই-এক কোটি টাকা তিনি ইনভেস্ট করছেন। নির্বাচন না, টাকা কামানোর জন্য তিনি মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। তাকে মনোনয়ন দিয়ে বিএনপি বানিজ্য করছে। বিএনপির এই অপরাজনীতির সাথে আমি থাকবো কি না তাও ভাবার সময় এসেছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে ইঙ্গিত করে বাবুল চৌধুরী বলেন, ‘একজন ব্যক্তির নির্দেশে গোটা জেলা বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। তার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কেউ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। যে করেনি তাকে বহিষ্কার করা হয়ছে। হয়তো আমার সময়ও ঘনিয়ে আসছে। সাবেক প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন দলের পদ ও মনোনয়ন বিক্রির টাকা কালেকশন করেন। এই ধারা চললে বিএনপির রাজনীতি করা যাবে না। এখন নাটোরে আওয়ামী লীগের সাথে লিয়াজো রাজনীতি করে বিএনপি। দলের এই দুরবস্থা নিরসনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেশের অন্যত্র দলের বড় বড় নেতারা ভোট করছেন। আমিও ভোট করতে পারতাম নাটোরে। কিন্ত আমার থেকে সে সুযোগ কেড়ে নেয়া হল।
‘ এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, দলের পদধারি কোন নেতা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। কেউ করলে তার পক্ষে সরাসরি কাজ করা যাবে না। দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না বলেই তাকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে। দলের স্বার্থে বাবুল চৌধুরীর এ ত্যাগ স্বীকার আগামীতে মূল্যায়ন করা হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, আর্থিক সুবিধার জন্য এমদাদুল হককে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বা তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এমন অভিযোগ সঠিক নয়। আর্থিক লেনদেনের কিছু আছে কি না, তা আমার জানা নেই। দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। দলের বাইরে থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন হচ্ছে। ভোট না করলেও বাবুল চৌধুরি আমাদের সাথেই থাকবে।’ এ ব্যাপারে বক্তব্য মেয়র প্রার্থী এমদাদুল হক আল মামুনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার ছেলে এম হাসান পরশ জানিয়েছেন তিনি আগামী ৪ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগের জবাব দেবেন। আগামী ১৬ই জানুয়ারি ইভিএমে নাটোর পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।