নাটোরের নদী, ফসলি জমি এবং ইটভাটা
মাহাবুব খন্দকার : ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রাচীন নাটোর। নদী কেন্দ্রিক এই নাটোর শস্য ও মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে। ইতিহাস বলছে- ছাইভাঙ্গার বিলে নির্মাণ করা হয়েছিল নাটোরের রাজবাড়ী। আর এই রাজবাড়ীকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছিল নাটোর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে বড়াল, নারদ, ঈশাখাঁ, মুসাখাঁ, গদাই, গুড়নইসহ নাটোর জেলার উপর দিয়ে ছোট বড় ২৪ টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে চলনবিল, চিনিডাঙ্গা পদ্মবিল, হালতি বিলসহ নাটোরে ছোট-বড় প্রায় ১৯ টি বিল রয়েছে।
এই সমস্ত বিল যেমন বর্ষা মৌসুমে মৎস্য ভান্ডার। অপরদিকে বর্ষা শেষে বছরে দুইটি করে শস্য উৎপাদন হয়। উৎপাদিত খাদ্যশস্য জেলার খাদ্য চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি হয় বিভিন্ন জেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে নাটোর জেলায় প্রতিবছর ফসলি জমি কমছে গড়ে প্রায় ৬৪ হাজার বিঘা।
ইটভাটায় মাটির চাহিদা পূরণ করতে এই সমস্ত বিলে প্রতিবছর অবাধে পুকুর খনন হয়। মৎস্য ব্যবসা লাভজনক ও মাটি বিক্রির নগদ টাকার লোভে অনেক কৃষক হারিয়ে ফেলছে তাদের ফসলি জমি।আর খননকৃত পুকুরের পাশের জমিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
গবেষকরা বলছেন ফসলি জমি তৈরি হতে প্রায় আড়াই লক্ষ বছর সময় লাগে। খননকৃত পুকুর ভরাটের কোন সম্ভাবনা না থাকায় কৃষকের পক্ষে খননকৃত পুকুর ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করা অ-সম্ভাব।
ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য তিন থেকে চার ফসলি জমিতে অবাধে খনন করা হয় পুকুর। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের তথ্যমতে ২০২০ সালে নাটোর জেলায় তিন থেকে চার ফসলি জমিতে প্রায় আড়াই হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন নদী খনন করে মাটি রাখার জায়গা না থাকায় নদীর মাটি নদীতেই রাখা হয়। নদী উদ্ধার করতে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন। তবুও নদী রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না বরং বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে নদীকে আরো সংকুচিত করা হচ্ছে আর সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠছে।
ইটভাটা মালিকরা বলছেন নাটোরের নদী থেকে যদি মাটি ইটভাটায় সরবরাহ করা হয় তবে ১০০ বছরেও নদীর মাটি ফুরাবে না। অপরদিকে নদী খননের জন্য সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
যদি বলা হয় নদী থেকে মাটি ইটভাটায় দেওয়া যাবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই মাটি দেওয়ার অনুমতি দেবেন না। সেই ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ রয়েছে। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়াড়ী ইউনিয়নের রামাগাড়ী গ্রামে বড়াল নদীর উপর সম্প্রতি নির্মাণ হয়েছে বিশাল সেতু।
সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি ভরাটের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রায় দেড় হাজার ট্রাক্টর মাটি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাটি পাওয়ার আশায় এলজিডি নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন জানায়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে এলজিইডি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন।
এই আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের সুপারিশে পানি উন্নয়ন বোর্ড বড়াল নদী থেকে মাটি সরবরাহের অনুমতি প্রদান করেন। শস্যভান্ডার খ্যাত নাটোরের ফসলি জমি রক্ষায় প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ইটভাটার প্রয়োজনীয় মাটি নদী থেকে সরবরাহ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা নাটোরের সচেতন মহলের।