Homeসাহিত্যআমি ভাগ্যবান জাকির তালুকদার

আমি ভাগ্যবান জাকির তালুকদার

কথাসাহিত্যেই কাজ করব, এই সিদ্ধান্ত নেবার পর আমি বিদেশি লেখকদের লেখা পড়তে শুরু করিনি। যদিও পড়াশোনা ইংরেজি মাধ্যমে, তবু পাঠ্যপুস্তকের বাইরে ইংরেজি বই তেমন পড়তাম না।
বাংলাদেশের বাংলাসাহিত্যের লেখক হতে চাই, তাই আমাদের কথাসাহিত্যের ভাণ্ডারের সাথে পরিচিত হওয়াটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। সিদ্ধান্ত তো নিজের কাছে নিজের সিদ্ধান্ত। কাউকে বলা-কওয়া বা ঘোষণা দেবার কিছু ছিল না। লেখার হাত মকসো করার পাশাপাশি চলছিল পাঠ। বাংলাসাহিত্যের ভাণ্ডার যে সমৃদ্ধ তা জানতাম। কিন্তু এত যে বিশাল, সেটি জানতাম না। বঙ্কিম থেকে শুরু। প্যারীচাঁদ, কালীপ্রসন্ন সিংহ, মীর মশাররফ হোসেন, স্বর্ণকুমারী দেবী, রবীন্দ্রনাথ, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র, তিন বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ী, সুবোধ ঘোষ, জগদীশ গুপ্ত, কমলকুমার মজুমদার, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ শামসুল হক, অমিয়ভূষণ মজুমদার, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তখন লাগাতার পাঠ্যসূচিতে। আরো কতজন যে কত বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন!
সেগুলো পড়ছি, আর গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে বাংলাসাহিত্যের বিশালতায় এবং উৎকর্ষের উচ্চতায় । সেই গর্ব আজো সমান।
আমি যখন এই মধুভাণ্ডারে পরিব্রাজন করছি, তখন আমার কিছু আগে লিখতে আসা কয়েকজন আর সমসাময়িক অনেকের হাতেই দেখতাম বিদেশি সাহিত্যের বই। ‘আরে এইটা পড়োনি, তুমি তাহলে লিখবে কীভাবে?’ এমন কথা অনেকের মুখেই শুনেছি।
এখন তাদের অনেকেই সাহিত্যজগতে নেই। কয়েকটা বুড়বুড়ি তুলে তলিয়ে গেছেন।
পরে ইংরেজি, রুশ, ফরাসি, স্প্যানিশ, অন্যান্য ভাষার লেখকদের বই পড়েছি। দেখলাম, বাংলাসহ সকল ভাষার যে লেখাগুলি কালজয়ী হয়েছে, সেগুলো সবই নিজের মাটি আর মানুষের গভীরতম বাস্তবতা আর অনুভূতি নিয়ে লেখা।
বাংলাসাহিত্য করতে এসে বাংলাসাহিত্যের ভাণ্ডারের সন্ধান নেবার আগে দুই-চারটি বিদেশি বই পড়ে যারা ফরফর করে, তারা শুরুতেই হয়ে পড়ে ‘সাহিত্যের উদ্বাস্তু’।

ইংরেজি ভালো জানতাম না, এটিকে এখন আমার নিজের জন্য আশীর্বাদ মনে হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments