Homeমুক্তমতবিশ্বাস আর কল্পনার দোলাচল - মনিমুল হক 

বিশ্বাস আর কল্পনার দোলাচল – মনিমুল হক 

বিশ্বাস আর কল্পনার দোলাচল – মনিমুল হক

_____এক শিকারির জালে এক টুনটুনি ধরা পড়লো। জীবন বাঁচাতে টুনটুনি শিকারিকে বললো, আমি খুব ছোট, আমাকে দিয়ে তোমার পেট একটুও ভরবে না। বরং আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে তিনটি জ্ঞানের কথা শোনাবো। প্রথমটা তোমার হাতে বসে, দ্বিতীয়টা সামনের ডালে এবং তৃতীয়টা বলবো মগডালে গিয়ে। টুনটুনির প্রথম উপদেশ ছিল, অলীক কথা যদি কেউ বলে তা বিশ্বাস করবে না। শিকারি বললো, এটাতো আমিও জানি। পাখি বললো, ঠিক জানো, কিন্তু জানাটা খুব বড় বিষয় নয়, যা তুমি জানলে বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করাটাই বড় বিষয়। একথা বলে শিকারীর হাত থেকে উড়ে সামনের ডালে গিয়ে বসলো। দ্বিতীয় উপদেশ : কী হতে পারতো, কি হলে কি করতে বা যা তুমি হারিয়েছো অর্থাৎ যা অতীত হয়ে গেছে, আর ফিরে পাওয়া যাবে না তা নিয়ে আফসোস করো না। শিকারি বললো, তা আমি করি না। এরপর পাখি বললো, আমি কিন্তু সাধারণ পাখি নই। আমার পেটে মুক্তো রয়েছে যা মুরগীর ডিমের সমান। তুমি যদি আমাকে ছেড়ে না দিয়ে আমার পেট কাটতে তাহলে মুক্তোটি পেতে এবং ধনী হয়ে যেতে পারতে।

______মুক্তো হাতছাড়া হওয়ার দুঃখে শিকারী আফসোস ও বিলাপ শুরু করলো। পাখি বললো, বলেছিলাম না যে, তুমি উপদেশ অনুসরন করো না। উপদেশ জানা আর মানা এক জিনিষ নয়। তুমি তো এখন আফসোস করছো। শিকারি বললো, কিন্তু এই যে, মুক্তো হাতছাড়া হয়ে গেলো ? পাখি বললো, বলেছিলাম, কারো কোন অলীক অবাস্তব বা অসম্ভবর কথায় বিশ্বাস করবে না। আমি একটা ছোট্ট টুনটুনি, আমার পেটে মুরগীর ডিমের সমান মুক্তো থাকবে কিভাবে ? শিকারি বললো তাইতো ? এভাবে তো ভেবে দেখি নি। আবার তোমার তৃতীয় উপদেশ দাও।

,,,,,,,,,,,,,,,পাখি মগডালে গিয়ে বললো, হতভাগা, দুর্দশাগ্রস্থ ও মুর্খরা কখনো জ্ঞানীর কথা শোনে না। তারা শিখতে চায় না। তাই তারা প্রতারকদের অলীক কথায়, চালবাজের চালবাজিতে আর শোষকদের ভয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাদের জীবন অলীক কল্পনা অথবা ভয়ে, আতঙ্কে, অনিশ্চয়তায় শেষ হয়ে যায়। তারা দরিদ্র এবং বঞ্চিতই থেকে যায়। আমার প্রথম ও দ্বিতীয় উপদেশ থেকে তুমি কোন শিক্ষা নাও নি, তাই তৃতীয় উপদেশ শুনে আর কি করবে বলো ?

_____আসলে মানুষের জীবনে প্রথম চোরাবালিই হচ্ছে- অলীক কল্পনা। শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ মানুষ ছোটবেলায় চিন্তা করে, আমার বাবা-মা যদি অমুকের মতো হতো, বা যদি বড় ঘরে জন্মাতাম কিংবা অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে হতাম অথবা অমুক বিখ্যাত ব্যক্তির ভাই বা বোন হতাম তাহলে কতই না ভালো হতো, কত কিছুই না করতে পারতাম। এই যে ” #যদি_এটা_হতো_এবং যদি ওটা হতো” এগুলিই হলো অলিক কল্পনা। এটি হচ্ছে জীবনের প্রথম চোরাবালি-যেখানে মানুষ আটকে যায়।

_____মানুষ যখন অলীক কল্পনা করে তখন তার মস্তিস্ক এই অলীক কল্পনাকে বাস্তব মনে করে এবং সে এক ধরণের সুখানুভুতির মধ্যে থাকে। সে বসে বসে ভাবে, এই হলে এই হতো। কিন্তু আসলে পুরোটাই শুন্য। এ ধরণের ভাবনায় ক্ষনিকের সুখ সৃষ্টি হয় এবং মানুষ তার মধ্যে হারিয়ে যায়। তখন তার ব্রেন এ অলীক কল্পনাকেই বাস্তব মনে করে এবং যখন আবার সে বাস্তবে ফিরে আসে তখন এ সুখানুভূতি আর থাকে না। বরং তখন আফসোস ও হা-হুতাশের বৃত্তে সে ঘুরপাক খায়।

____ ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া মানুষ জীবন শুরু করতে চায় অতীত থেকে, নয়তো ভবিষ্যত থেকে। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া অতীত কিংবা অনাগত ভবিষ্যত থেকে জীবন শুরু করা যায় না। জীবনের শুরু বর্তমান থেকে। অর্থাৎ যা আছে তা নিয়ে। #আর_এটাই জিরো গ্রাউন্ড

 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments