“সংবাদ সাময়িকী”তে প্রিয় কবি কামাল চৌধুরীর একগুচ্ছ কবিতা – ওবায়েদ আকাশ
আমরা যখন পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকিয়ে থাকতাম হাওয়া ৪৯, কবিতীর্থ, দাহপত্র, অনুষ্টুপ, কবিতা পাক্ষিক, এবং মুশায়েরা কিংবা আরো সব বিকল্প চিন্তার লিটল ম্যাগাজিনের দিকে। পড়তাম উত্তর আধুনিকতা, পোস্ট মডার্নিজম, পোস্ট কলোনিয়ালিজম। পড়তাম ফুকো, দারিদা, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, লাকা, সাঈদ, গ্রামসি… তখন কবি কামাল চৌধুরী আমাদের শোনাতেন আমেরিকান পোস্টমডার্ন কবিতা, ইউরোপীয় পোস্টমডার্ন চিন্তার ইতি-অগ্র উল্লম্ফন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। তখন, অন্তত ২৫/৩০ বছর আগে থেকেই শাহবাগ ছিল আমাদের কবিতার তীর্থভূমি।
কবি কামাল চৌধুরী প্রায়ই আসতেন শাহবাগ, ধীরে ধীরে তৈরি হতে থাকে ঘনিষ্ঠতা। তখন থেকেই কামাল ভাই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। কিন্তু তাঁর অবয়বজুড়ে যেন ফুলের ত্বকের মতো জড়িয়ে থাকতো কবিতার ঘ্রাণ। মনে পড়ে কামাল ভাইয়ের “নির্বাচিত কবিতা”র একটির প্রথম সংস্করণ প্রথম দিনেই কিনে ফেলেছিলাম আমি।
নিয়েছিলাম তাঁর অটোগ্রাফ বইমেলাতেই। তারপর কামাল ভাই, অনেক বড় বড় সরকারি পদে চাকরি করেছেন, শীর্ষ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। এখনো করেন। কিন্তু আপাদমস্তক একজন কবিই কামাল চৌধুরী। কবিতা তাঁকে ছাড়তে চাইলেও তিনি কবিতাকে ছাড়েননি। তখনও কামাল ভাইয়ের কবিতার স্বাতন্ত্র্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। এখনো কবি কামাল চৌধুরী সদা আপডেটেড। যে কোনো তরুণ কবির প্রতিদ্বন্দ্বি। প্রচুর পড়েন, প্রচুর জানেন তিনি। কবিতা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলে, ইজম নিয়ে কথা কইতে থাকলে, বিশ্বসাহিত্য নিয়ে ভাষণ দিতে লাগলে যেন শেষই হতে চায় না। ব্যাপক পাঠের ভেতর দিয়ে নিজেকে রিনিউ করেন নিয়ত। তাঁর দিগন্ত বিস্তৃত।
সাহিত্য তাঁর সহজাত পরিমণ্ডল। কবিতা তাঁর প্রতিদিনের অবগাহন। গত শতকের সত্তরের দশকের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর তিনি। ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বানিয়েছিলেন কবিতার ক্যাম্পাস। প্রাত্যহিতকতার যাপনকে করেছেন কবিতার যাপন। কবিতার প্রতি তাঁর এই অনুরাগকে সমীহ না করার সাধ্য কার! তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে “সংবাদ সাময়িকী”তে মুদ্রিত হলো তাঁর একগুচ্ছ কবিতা। স্যালুট প্রিয় কবি কামাল চৌধুরী।