“আমারে গরীবের বাড়ি ভাঙিচ্ছে, প্রাণ কোম্পানি যে জাগা দখল কোরে রাখিছে, উচ্ছেদ কোরবি কে?”
নাটোর নিউজ:
বেলী বেওয়া , সেই কবে স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে মেয়ে নিয়ে নারদ নদের পাড়ে সরকারি খাস জমিতে বাড়ি করেছিলেন। আজকের উচ্ছেদে সব হারিয়ে দুচোখে হাহাকার নিয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসে আছেন তিনি। খোলা দৃষ্টিতে শুধু বঞ্চনা দুঃখ আর না পাওয়ার হাহাকার। ক্যামেরা দেখেই চোখে যেন জল বাধ মানে না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন-” আমারে এমপি সাব জাগা দিতে চাছিলো বাড়ি করার জন্যো, কিন্তু সেই জাগা না দিয়েই উচ্ছেদ কোরিচ্চে। গোরিবের কোতা কেউ ভাবে না। নদীর মোদ্যে বড় বড় বিল্ডিং কোরিছে বড় লোকেরা, কোম্পানিরা, সোরকারের লোক সেগুলা চোকে দ্যাকে না। আমরা এখুন ছাওয়াল পাওয়াল লিয়ে কোতি যাবো?
“আমারে গরীবের বাড়ি ঘর ভাঙিচ্ছে, প্রাণ কোম্পানি যে জায়গা দখল কোরে রাখিছে, উচ্ছেদ কোরবি কে?” দেশে রোহিঙ্গারে জায়গা হয় আমারে জায়গা হয় না ক্যা? এমন করেই বিলাপ করছিলেন নারদ নদে উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত আছিরন বেওয়া।
শুধু এই মানুষগুলোই নয় ক্ষতিগ্রস্ত সবার মুখেই একই কথা প্রভাবশালীদের দখলে মুক্ত না করে সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ভূমিহীন মানুষদেরকে নদীর পাড় থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
এদিকে সচেতন মহলের প্রতিনিধিরা জানান, অবৈধ প্রভাবশালী দখলদারেরা এই সমস্ত ভূমিহীন দখলদারদের কাজে লাগিয়ে একটি আন্দোলন তৈরি করতে পারে। সে ব্যাপারে প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে। দৃশ্যমান প্রভাবশালীদের উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে এই সমস্ত ভূমিহীনদের সান্তনা দিতে হবে যে ক্ষমতাশালী যেই হোক , দখলদার যেই হোক তার যত শক্তিশালীই হোকনা কেন উচ্ছেদ করা হবে তাদেরও। তাছাড়া মুখথুবড়ে পড়বে উচ্ছেদ কার্যক্রম, প্রশ্নবিদ্ধ হবে প্রশাসনের উদ্যোগ। তাই দ্রুত নারদ নদীর পাড় থেকে প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানান তারা।
সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার তাগাদা দেয়া সত্বেও এসমস্ত দখলকারীরা তারা নিজেদের জায়গায় ফিরে যায়নি। এছাড়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারতেন এই সমস্ত যারা প্রকৃত ভূমিহীন রয়েছেন তাদের পুনর্বাসন এর। তবে এই সমস্ত নদী দখলকারীদের কয়জন এর সম্পত্তি নেই তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তারা অনেকেই জোর করে নদী দখল করেছেন এবং স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। অন্যত্র নিজেদের জায়গা থাকতো এখানে সরকারি জায়গা দখল করে বসবাস করছেন। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের দাবি করেন তারা। পাশাপাশি প্রকৃত ভূমিহীনদের বাছাই করে তাদের অন্যত্র পুনর্বাসনের দাবি জানান তারা।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ হাসান জানান, নাটোর জেলার পরিবেশ তথা শহরকে রক্ষায় নদী দখল উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমাদের ভূ প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় নদী দখল উচ্ছেদ এর কোন বিকল্প নেই। জলাবদ্ধতা তৈরিসহ নানা ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি করছে অবৈধ দখল কারীরা।
জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম আহমেদ জানান, জেলার নারদ নদ সহজে সমস্ত নদী দখল করে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে সেই সমস্ত নদী দখলমুক্ত করে প্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এর আগে নাটোরে বহুল আকাঙ্ক্ষিত নারদ-নারদ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। আজ সকালে নাটোর সদর হাসপাতাল মোড় এলাকায় হেমাঙ্গিনী সেতু প্রান্ত থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ হাসানের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।