আমার মা
জাহিদ হাসান
মাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আব্বা তোমাকে, মনে ব্যথা পেয়েছ এমন, কতবার বকা দিয়েছে?” মা বলল, “তিনবার”। কাহিনী গুলো বলার অনুরোধে জানালাম,
“প্রথমবার বিয়ের পর পর। আমি তাঁকে ‘আপনি’ করে বলতাম, তাঁর পছন্দ হত না। কিন্তু অনেকবার বলার পরেও আপনিই বলতাম। একদিন পান খেতে চাইল। পান দিয়ে বললাম, ‘নেন’। ‘ফের আপনি’ বলে তোর আব্বা জোরে চিৎকার করে উঠলো। খুব ভয় পেয়েছিলাম। আর আপনি বলি নি তারপর থেকে।“
“এরপর একদিন, তখনো আমার বাচ্চাকাচ্চা হয়নি, চুলা থেকে সিগারেট ধরিয়ে আনতে বলল। আমি ধরিয়ে রান্নাঘরেই নিজে একটু টানলাম। তারপর দিতে গেলাম। সিগারেটের মাথা বেশ খানিকটা পোড়া দেখে তাঁর সন্দেহ হল। জিজ্ঞেস করল, ‘এতখানি কমলো কেমন করে?’ বললাম, ‘ধরিয়ে রেখেছিলাম, তাই পুড়ে গেছে’। আমার মুখ কাছে টেনে নিয়ে শুঁকে দেখল, গন্ধ পেল, আর তীব্র একটা বকা দিল, ‘সিগারেট খেলে খাও, মিথ্যা বললে কেন?”
“শেষবার, তোর বয়স সাড়ে তিন কি চার। গুটগুট করে হেটে বেড়াস, কুটুর কুটুর করে কথা বলিস। আধপড়া বইটা রেখে আমি রান্না দেখতে গেছি। এসে দেখি বই নেই। তোকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বই কই’, তুই বললি, ‘বালতির পানিতে ভিজিয়ে রেখেছি’। যেয়ে দেখি বই পানিতে গ’লে হালুয়া। তোকে মারলাম। ভাবলাম সে বাড়িতে আসার আগেই কান্না থেমে যাবে। কিন্তু তুই থামলি না। সে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘ছেলে কান্দে ক্যান’। মিথ্যা বলা যাবে না, সত্যি বললাম, ‘বই পানিতে ভিজিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে তাই মেরেছি’। তখন আমাকে খুব জোরে ধমক দিয়ে বললো, ‘ও কি বই নষ্ট করেছে? ও তো খেলেছে! বাচ্চা খেললে মা তাকে মারবে?’
শেষে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি আমার আব্বাকে কতবার বকা দিয়েছ যাতে সে মনে আঘাত পেয়েছে?” মা ফিক করে হেসে ফেলল। বলল, “অতো হিসাব নেই, কয়েক হাজার তো হবেই! তবে মনে আঘাত পেয়েছে কিনা বুঝিনি। যা-ই বলতাম, শুধু হাসতো!”
১৫ বছর হলো আব্বা নেই। কিন্তু মা যেন এখনও তাঁর সাথেই মনে মনে সংসার করে। তাই এই বাড়ি ছেড়ে, নিজের সংসার ছেড়ে আমার বা অন্য সন্তানদের বাসায় থাকতে চায় না।