বর্ডার বাউল
দেবেশ ঠাকুর
কাঁটার ওপারে দেশ কাঁটার এপারে ভবন
মাঝখানে নিরাসক্ত ভুঁই
ওপারে বি.ডি.আর ঘোরে, এপারে বি.এস.এফ শাসন
এপারে পদ্ম ফোটে, ওই পারে যুঁই
মাঝখানে আশ্চর্য নদী
মাঝখানে বাস করে সিরাজ, লালন,বলরাম, ব্রজলা, রাধারমন
পেট্রোল ফুরিয়ে যায় তবু চলে করিম- শা-র গাড়ি
এপারের বাউলিনি ওপারের সুফিয়ানকে মেঘদুত বার্তা পাঠায়।
সে বড়ো হৃদয় চিঠি, সে বড়ো প্রেমের
কেউ কাউকে ছোঁয়না হাত ছুঁয়ে যায় মন্দাকিনী গান।
দেখে, হাসে, কাঁদে আর অভিমানে ভাসে।
এর হাতে ভিসা নেই, আছে একতারা
ওর হাতে ভিসা নেই, দিব্য খমক
এক গানে এক তাল, এক ছন্দ, সুর
ওপারের সুর এলে এপারে পাতা নড়ে
এপারের টিয়া বসে ওপারের ঘরে
বি.ডি.আর বিএসএফ ভাবে
কিভাবে যে আটকাবে গান আর সুর পাসপোর্ট।
বাউলিনি গান গায় ওপারকে শোনায়
‘মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে চাতক প্রায় অহর্নিশি চেয়ে আছে কালো শশী হবে বলে চরণ দাসী ও সে হয় না কপাল-গুণে’ ওপারের দোতারা বাজে, সুর তোলে কেঁদে
‘আমার বাড়ির পাশে আরশিনগর সে এক পড়শি বসত করে আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’
বি.ডি.আর বি.এস.এফ দেখে সুরে গাঁথা দেহময় কিছু কিছু ভাসমান ছায়া
কিছু রুমি কিছু সনাতন আর কিছু বা হাসন
সুরেও কি ভিসা লাগে? গানে পাসপোর্ট?
ওদের তো ভিসা নেই, তারকাঁটা মাঝে তাই আর গুলি শিসা –
বাউলিনী গেয়ে চলে
‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে
তাই হেরি তায় সকল খানে
আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায় -’
তারকাঁটার বাধনে পড়ে ওপারের সুফিয়ান কেঁদে ওঠে বাল্মিকীর ক্রৌঞ্চ বধ সুরে –
‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে….’
সংবিধান ফাঁদে পড়ে দুপারের সুর কাঁদে গান কাঁদে
এপারেতে দেবগিরি, ওপারেতে অলকার ঘর,
দুপারেই রাষ্ট্র আছে, আদালত আর নির্বাচন
নির্বাচন নির্বাসন প্রায় সমার্থক
আশঙ্কা বুকে নিয়ে কতজন অবাঞ্ছিত কতজন ক্লীব
এপারের বাউলিনী ওপারের সুফিয়ান-
ওরা তো ভোটার নয় অথচ মানুষ –
গানই ওদের কার্ড, গানই আধার মাঝে মধ্যে সুর ভাসে ‘বড়ো সংকটে পড়িয়া দয়াল বারে বারে ডাক পাঠাই-’ দুপারের বাঁধন খোলে, প্রেম জাগে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা জাগে দেহে কোন ছোঁয়া পায় না, সুর ছোঁয় হৃদি ওপারে বাংলা গান, এপারেও বাংলা জাগে- মাঝে তারকাঁটা-