Homeসাহিত্যকবি বেনজির শিকদার এর কবিতা বিষন্ন নিঃসঙ্গতা

কবি বেনজির শিকদার এর কবিতা বিষন্ন নিঃসঙ্গতা

বিষন্ন নিঃসঙ্গতা

বেনজির শিকদার

 

কোনো কোনো দিন ক্যামন যেন অনাকাঙ্খিত ভাবে চারপাশকে বিষন্নতায় ঢেকে মনের আনাচ কানাচ অস্থির করে তোলে।

 

যেন অদৃশ্য কোনো অ-শুভ মনের অনুভূতিকে নির্যাতন করে চলে। মন না চাইলেও মন খারাপিয়ার দোলাচলে সময়কে যাপন করতে হয় উপকুলে আছড়ে পড়া বিরহ-বিষন্নতায় ব্যাধি জর্জরিত অস্তিত্ব নিয়ে নিত্য খেলারত সুমুদ্রের ঢেউয়ের মতো।

কাজ হতে ফিরে এমনই এক অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম।

 

স্কুল ফেরত বাচ্চাদের খাইয়ে দাইয়ে নিজের মতো করে আশ্রয় পেতেই চলে এলাম আমার গোলাপি রুমটিতে। শ্রীকান্ত আচার্য্যর কণ্ঠে পরপর ১৩ বার শুনলাম…

“জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণা ধারায় এসো সকল মাধুরী লুকাতে যায় গীত সুধারসে এসো… হৃদয়-প্রান্তে হে জীবননাথ শান্ত চরণে এসো…l ”

নাহ! বিষন্ন নিঃশ্বাসে ভর করা ব্যাধি দূর হলো না।

ধীর পায়ে উঠে গেলাম ঘর গোছাতে। প্রায় সময়ের অভ্যেস আমার, ঘর গোছানো শেষে প্রতিটা রুম আপন মনেই বেশ কয়েকবার ঘুরে ঘুরে দেখা।

আজও দেখলাম। কিন্তু ভালোলাগার বৃষ্টিতে ভিজলো না মন।

স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম ভেতরে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। কিন্তু কেন (!) তা যেন রয়ে গেলো বহুদূরে, অধরাই।

খাবার দিতে দিতে কথা কইতে চাইলাম গোল্ডফিসগুলোর সাথে l জানতে চাইলাম কুশলাদি। মনে হলো ওদের মাঝ হতে মুচকি হেসে একজন বলতে চাইছে…

“মন খারাপ করো না, জীবনের কিছু সময় এমন অসহায় হয়ে পেয়ে বসে মাঝে মাঝে। মনেহয়, চারপাশ ঘিরে যেন কেবলই আর্তনাদ! জীবন মানেই কখনো গতিময়তা, কখনো বালুচরে মরীচিকা দহনে প্রাণ যায় যায় উপক্রম। কখনোবা স্বপ্নময় রঙিন প্রজাপতি এক! অপেক্ষা করো…ভাগ্য দেবী এলো বলে…l”

খুব করে চাইলাম মনের কোণে বেদনাতুরের জমাট রক্ত অশ্রু তুহিন সরিয়ে বাচ্চাদের সাথে মিশতে। ক্যারাম নিয়ে বসে গেলাম। ঘন্টাখানেক চললো আঙুলের দৌরাত্ম।

না…যন্ত্রজীবনের ইঁদুর দৌড়ের গদ বাঁধা রুটিন থেকে বেশিক্ষণ দূরে থাকতে পারলো না এই মন। ভাবলাম, মিশিগানে থাকা তিনারে একখানা মেসেজ দেই।

দু’টো মনেরকথা বলি!

যে আমি বরাবর মনের কথাটি গোপনে রাখা মানুষ; সে কিনা নির্বিকারে পনেরো বছরে সম্ভবত প্রথম বারের মতো বললাম…মিস ইউ!

অফিস হতে কখন ফিরবা…?

ওমা! তিনার কোনো রিপ্লাই নাই! অথচ দিব্যি দেখাচ্ছে মেসেজ সিন!

পিত্তি জ্বলে যাবার অবস্থা!

রাগ কমাতে ঝাল ঝাল করে লিখলাম “পঁচা মানুষ তুমি”।

ভদ্রলোকের দয়ার শরীর। অবশেষে লিখে পাঠালেন…”বিজি আছি”।

ইচ্ছে করলো তাকে বলি…আরে ও ইঞ্জিনিয়ার, ইঞ্জিনিয়ার…আগে সামলাও তোমার ঘর! নইলে ঘরের ঘরণী-যে হয়ে যাবে তোমার পর!

পরক্ষনেই ভাবলাম থাক, একা মানুষ, একা একা থাকে। এতটা জোরজুলুম নাইবা করি।

রাত নামলো! সবাই যখন ঘুমে। শূন্যতার আবেশী অনুভূতি কাটাতে খুলে বসলাম পুরোনো অ্যালবাম। পনেরো বছর আগে তোলা কিছু ছবিতে চোখ আটকে গেলো।

পনেরো বছর! জীবন থেকে পনেরোটি বছর চলে গ্যাছে! অজান্তেই বলে ফেললাম “হায় জীবন এতো ছোট কেন এ ভুবনে!?”

ছবির দিকে তাকিয়েই হঠাৎ-ই মনে হলো, প্রকৃতিতে মেঘ কালো দিন আর সূর্য ওঠা সকাল দু’টোই সুন্দর হয়। যদি কেউ তার হৃদয়ের চোখ খুলে সে রূপ দেখার ক্ষমতা রাখে!

মুহূর্তেই হৃদয় উঠোনে সাজিয়ে রাখা খুশির অণু পরমাণুগুলো যেন খলবলিয়ে উঠলো! স্থির দৃষ্টি রেখে ছবির অন্তরালে খলবলিয়ে উঠলো একটি মুখ! সুবর্ণা মুস্তফা!

হৃদয়ে তরঙ্গ উঠে বুকের মাঝারে শিহরণ জাগালো চিরকালীন কাছের মানুষটি! প্রাণের মানস প্রতিম… আহা! পতিদেব!

চোখ পড়লো ভনভন শব্দে ঘরের ছাদ ছুঁয়ে উড়ে বেড়ানো একটা ভ্রমরের দিকে। ভাবলাম এ বোধহয় বিধাতারই খেয়াল!

অবাক চোখে আওড়ালাম, হয়তো ওর-ও মনের ঘরে একটা উঠোন আছে! সে উঠোনে রাত নামলে চাঁদ হাসে, ফুল ফোটে, পাখি গায় অতঃপর কখনো দমকা হাওয়ায় ছুঁটে আসা মেঘের আড়াল কিংবা ঝড় শেষে সূর্য হাসে।

বললাম… ‘ভ্রমর! ও ভ্রমর! দেখতে পাচ্ছ(!) আকাশ ভারী! হয়তো ঝড় আসবে! যাবে বন্ধুর কাছে!?

বন্ধু আমার দূর সুমুদ্রে মিশিগানের পাড়ে! যাওনা ভ্রমর…ওকে বলো গিয়ে…মন আমার ভীষণ উদাস একলা এই ঘরে!

ভ্রমর শুধালো, যেতে পারি কিন্তু চিনবো কি করে তোমার বন্ধুকে?

বললুম, এতো ভারী সহজ! আমার চুলের গন্ধ শুকে নাও। মিশিগানের পাড়ে যে যুবকের বুকে এই গন্ধ খুঁজে পাবে, বুঝবে সেইতো আমার বন্ধু!

যাও ভ্রমর যাও। তারে বলে দাও…এই রাতে লিলুয়া বাতাস যেন পৌঁছে দেয়…ঘন-কালো, গাঢ় তার লোমশ বুকের তীব্র আলিঙ্গন! আমি সেই বাতাস গায়ে মেখে ভুলে যাবো রাত্রির নিঃসঙ্গতা’।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments