নাটোর নিউজ: ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় স্কটল্যান্ডের ডিজাইনার অ্যালান ম্যাককার্টির। অনুভূতি আদান-প্রদানের এক পর্যায়ে বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে।
একদিন অ্যালান জানায়, তার ডিজাইনার ফার্মের জন্য জরুরি কিছু টাকা দরকার। ভালোবাসার মানুষটির বিপদে এগিয়ে আসে মেয়েটি। অনলাইনে পাঠিয়ে দেয় মাত্র ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা! ব্যাস, এরপরই ‘হাওয়া’ অ্যালান। টাকা, প্রেম- দুটোই হারিয়ে নি:স্ব মেয়েটি নিরাপত্তা কমিশনের দারস্থ হয়। খোঁজ নিয়ে বের হয় চমকে দেবার মতো তথ্য। অ্যালানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খোলা হয় নাইজেরিয়ার একটি কম্পিউটারে। আর ব্যবহৃত ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের এক ক্যান্সার রোগীর!
কয়েক বছর আগে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাটি শুনে বিদেশী মেয়েটিকে গাধা মনে হচ্ছে তাই না?
চলুন, নিজের জানা স্বদেশী কয়েকটি উদাহরণ দেই।
হংকংয়ের মেয়েটির ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পেয়ে পুলকিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শায়ক (ছদ্মনাম)। কয়েকজন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখে অ্যাকসেপ্ট করতে দ্বিধা হয় না। দিনে দিনে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। মাস খানেক পর একদিন শয়াককে স্কাইপেতে ডাকে মেয়েটি। ভিডিও কলে ছোট্ট টপস পড়া সুন্দরী মেয়েটিকে দেখে বিমোহিত শায়ক। ইঙ্গিতময় কথাবার্তা বলতে শুরু করে মেয়েটি। বিদেশি মেয়ে তার উপর ওভারস্মার্ট- দুষ্ঠু বুদ্ধি খেলে যায় শায়কের মনেও। মেয়েটির উসকানিতে এমন সব ভিডিও চ্যাট হয়, যার জন্যে প্রস্তুত ছিল না শায়কও। মাত্র ১৫ মিনিটের সেই ভিডিও-ই সারা জীবনের যন্ত্রনায় পরিণত হয়। ঘন্টা খানেক পড়েই মেয়েটি ফেসবুকে একটি ইউটিউব লিংক ইনবক্স করে। ক্লিক করতেই চক্ষু চড়কগাছ! খানিক আগে যা হয়েছে তার সবই আপলোড করে দিয়েছে সে।
এরপর শুরু হয় ব্লাকমেইল। ৫ হাজার ডলার না দিলে ছড়িয়ে দেয়া হবে ভিডিও! বহু অনুনয়-বিনয় শেষে ৫০০ ডলারে রাজি হয় প্রতারক। দেশ থেকে টাকা পাঠানোর কোনো সুযোগ না থাকায় এক বন্ধুর মাধ্যমে বিদেশ থেকে দাবিকৃত ওই টাকা পাঠানো হয়। ভিডিও ডিলিট করে প্রতারক। রক্ষা পায় শায়ক। তবে দুই দিনের লাগাতার হুমকীতে ভীষণ মানসিক চাপ আর ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছেলেটি। এই ভয় হয়তো তাকে সারা জীবন তাড়া করবে!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েটি স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গেছে বিশ্বভারতীতে। দু-মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়! কিন্তু কী এমন হলো যে বহিস্কারই করতে হবে?
ঘটনা ওই ফেসবুকেই। মেয়েটির সঙ্গে প্রেম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের। সম্পর্কটা টেকেনি। ক্ষিপ্ত ছেলেটি আপত্তিজনক কিছু ছবি ও ভিডিওচ্যাটের দৃশ্য ই-মেইলে পাঠিয়ে দেয় মেয়েটির সকল শিক্ষকের কাছে।
ব্যাস, মান-সম্মান বাঁচাতে স্কলারশীপ বাতিল করে মেয়েটিকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মেয়েটির পরিবার দৌড়ে আসে ঢাবি প্রক্টরের কাছে। একাধিক মেইল ও ফোন করে সব খুলে বলার পর শেষ রক্ষা হয় মেয়েটির।
প্রতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রক্টর অফিসে, পুলিশের সাইবার সেন্টারে যে অভিযোগগুলো জমা হয়, তার সিংহভাগই ফেসবুক-অনলাইন কেন্দ্রীক। এক সময় প্রাণের অধিক ভালোবাসা ছিল, না করতে পারেননি, আদান-প্রদান হয়েছে মন ছাড়াও বহু কিছু। একদিন হুট করে সম্পর্কটা ভেঙ্গে গেল, মুহুর্তেই পাল্টে যাবে সব। প্রিয় মানুষটাই পরিণত হবে ভয়ংকর এক জানোয়ারে। চারপাশে এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ।
ইন্টারনেট আমাদের জীবন যেমন সহজ করেছে, তেমনি ভীষণ জটিলও করেছে। ক্ষনিকের একটুখানি অসতর্কতা, একটুখানি ভুলই শেষ করে দিতে পারে তিলে তিলে গড়ে তোলা ব্যক্তিত্ব আত্মসম্মান, এমনকি বেঁচে থাকার সমুদয় ইচ্ছাশক্তিও।
মানুষকে অবিশ্বাস করা পাপ;
তবে অন্ধ-বিশ্বাস মহাপাপ!