ঈশ্বর ও প্রকৃতি
স্পিনোজা
“আইনস্টাইন যখন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বক্তৃতা দিতেন তখন শিক্ষার্থীরা তাকে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করত তা হলঃ
– আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?
আইনস্টাইন সর্বদা উত্তর দিতেন, আমি স্পিনোজার ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি।
বারুচ ডি স্পিনোজা ছিলেন একজন ডাচ দার্শনিক যিনি ডেসকার্টসের সাথে সপ্তদশ শতাব্দীতে দর্শনের অন্যতম দুর্দান্ত যুক্তিবাদী হিসাবে বিবেচিত হতেন।
স্পিনোজার ঈশ্বর বলতেন:
প্রার্থনা বন্ধ কর।
আমি তোমাকে যা বলতে চাই তা হ’ল পৃথিবীর পথে বেরিয়ে আস এবং তোমার জীবন উপভোগ কর। আমি চাই যে তুমি গান কর, মজা কর এবং আমি তোমার জন্য যা কিছু তৈরি করেছি তার সমস্ত কিছু উপভোগ কর।
তোমরা নিজেরাই আমার নামে তৈরী করেছ এমন অন্ধকার, শীতল মন্দিরে প্রবেশ, তা বন্ধ কর। আমার বাড়ি প্রকৃতপক্ষে পাহাড়ে, বনে, নদীতে, হ্রদে, সৈকতে। আমি এসমস্ত স্হানে থাকি এবং সেখানে আমি তোমাদের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করি।
তোমার জটিল জীবনের জন্য আমাকে দোষ দেওয়া বন্ধ করে দাও; আমি তোমাকে কখনই বলিনি যে তোমরা পাপী বা যৌনতা একটি খারাপ জিনিস। যৌনতা একটি উপহার যা আমি তোমাদের দিয়েছি এবং যার সাহায্যে তোমরা ভালবাসা প্রকাশ কর, পরমানন্দ লাভ কর। কাজেই তোমাদের বিশ্বাসের দাসত্ব করতে গিয়ে সমস্ত কিছুর জন্য আমাকে দোষ দেবে না।
আমার সাথে মোটেই সম্পর্কিত নয় বলে নানা তথাকথিত পবিত্র শাস্ত্রাবলী পড়া বন্ধ কর। যদি তুমি আমাকে সূর্যোদয়ে, প্রাকৃতিক দৃশ্যে, তোমার বন্ধুদের চেহারাতে, তোমার সন্তানের চোখে দেখতে না পাও তবে আমাকে কোনও বইয়ে খুঁজে পাবে না!
কোন কাজটি করতে চাও যা তোমার ভাল লাগে তা আমাকে জিজ্ঞাসা বন্ধ কর। আমাকে এত ভয় করা বন্ধ কর। আমি তোমার বিচার বা সমালোচনা করি না, রাগও করি না বা বিরক্ত বোধও করি না। আমি প্রকৃত পক্ষে খাঁটি ভালবাসা মাত্র।
ক্ষমা চাওয়া বন্ধ কর, ক্ষমা করার কিছুই নেই। যদি আমি তোমাকে তৈরি করে থাকি তবে তোমাকে আবেগ, সীমাবদ্ধতা, আনন্দ, অনুভূতি, প্রয়োজন, অসঙ্গতি … স্বাধীন ইচ্ছা এসবে পূর্ণ করেই তৈরী করেছি। আমি যা কিছু দিয়ে তোমাকে তৈরী করেছি তার জন্য কীভাবে তোমাকে দোষ দেব? আমি যেমন ভাবে তোমাকে তৈরি করেছি তেমনটা হওয়ার জন্য তোমাকে কেন শাস্তি দেব? তুমি কি মনে কর যে আমি আমার যে সমস্ত সৃষ্টি যারা খারাপ কাজ করে তাদের পোড়াতে একটি জায়গা তৈরি করেছি? ঈশ্বর কি এমনটা করতে পারে?
তুমি সমবয়সীদের সম্মান কর এবং নিজের জন্য যা চাও না তা অন্যের জন্যও করো না। আমি কেবল তোমাকে বলি তোমার নিজের জীবনের প্রতি মনোযোগ দাও, সেটাই হোক তোমার জীবন চলার পথের পরিচালক।
আমার প্রিয় মানুষেরা এই জীবন কোনও পরীক্ষা নয়, স্বর্গের পথে পা বাড়ানো কোন মহড়া নয়। এই জীবন শুধু পৃথিবীর জন্যই এটি তোমার জানা প্রয়োজন।
আমি তোমাকে একদম মুক্ত করে রেখেছি, কোন পুরষ্কার বা শাস্তি নেই, পাপ বা উত্তম গুণাবলীর জন্য কেউ তোমাকে চিহ্নিত করে রেকর্ড করে রাখে না।জান্নাত অথবা জাহান্নাম নেই।
এই জীবনের পরে কিছু আছে কিনা তা আমি তোমাকে বলতে পারি না তবে আমি তোমাকে একটি টিপস দিতে পারি। তেমনটা ভেবে বাঁচো যেন এরপর কিছু নেই। যেন এটি তোমার উপভোগ করার, ভালোবাসার আর বেঁচে থাকার একমাত্র সুযোগ।
সুতরাং, যদি এর পরে আর কিছু না থাকে তবে তুমি যে সুযোগটি পেয়েছো তা উপভোগ কর। এবং যদি কিছু বলার থাকে তবে জেনে রাখ যে তুমি ঠিক বা ভুল আচরণ করেছ কিনা তা আমি প্রশ্ন করব না। বরং আমি জিজ্ঞাসা করব তুমি কি পৃথিবীর জীবন পছন্দ করেছ? সেখানে আনন্দে ছিলে কি ? তুমি পৃথিবীতে কি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছিলে? তুমি পৃথিবীতে কি শিখেছো?…
আমাকে বিশ্বাস করা বন্ধ কর। বিশ্বাস করা হচ্ছে অনুমান করা, কল্পনা করা। আমি চাই না তুমি আমাকে বিশ্বাস কর, আমি চাই তুমি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখ, নিজেকে বিশ্বাস কর। আমি চাই যখন তোমার প্রিয়জনকে চুম্বন করবে সেখানে যেন আমায় খুঁজে পাও। তোমার ছোট্ট মেয়েকে যখন আদর করবে, তোমার পোষা প্রাণীর যখন যত্ন নেবে কিংবা যখন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে গভীর শ্বাস নেবে সেখানেই আমাকে খুঁজে পাবে।
আমার প্রশংসা বন্ধ কর, কী ধরণের অহংকারী ঈশ্বর আমি বলে তোমার মনে হয়?
আমি প্রশংসিত হতে হতে বিরক্ত। আমি ধন্যবাদ পেয়ে পেয়ে ক্লান্ত। কৃতজ্ঞতা বোধ করছ আমার প্রতি? নিজের স্বাস্থ্য, নিজের সম্পর্ক গুলো আর নিজ বাসস্থান পৃথিবীর যত্ন নাও। নিজের আনন্দ প্রকাশ কর! এটাই আমার প্রশংসা করার শ্রেষ্ঠ উপায়।
আমার সম্পর্কে যত জটিল কল্পনাশ্রয়ী বিষয়াবলী শেখানো হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি করা বন্ধ কর।তোমার কেন আরও অলৌকিকতা প্রয়োজন? কেন এত ব্যাখ্যা প্রয়োজন?
একমাত্র নিশ্চিত বিষয় হ’ল তুমি পৃথিবীতে আছ, তুমি বেঁচে আছ যে পৃথিবী আশ্চর্য সব বিষয়ে পরিপূর্ণ।
স্পিনোজা (ভাষান্তর Ashfaqul Jalil)”