তম স্বাহা / মধুছন্দা মজুমদার
তম স্বাহা
মধুছন্দা মজুমদার
২০১৬ সালের আগস্ট মাস, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় তখন, মন ভেঙে হাজার টুকরো, শরীরে বাসা বেঁধেছে তিনটি কঠিন অসুখ, চূড়ান্ত আর্থিক অনটন, পারিবারিক অশান্তি, মোট কথা আমি তখন ভয়াবহ এক নগরদোলায় বসে আছি, কখন অবস্থা ঠিক হবে তার কোনো ইঙ্গিত নেই .
সেই রকম এক স্তব্ধ দিনে ফেসবুক থেকে পাওয়া এক বন্ধু (যিনি এখন আমার বন্ধু নন) দুটি জিনিস suggest করেন, এক কানে ear plug লাগিয়ে মেডিটেশন এবং দুই “চন্ডীতে সাধন সমর” বইটি ধৈর্য ধরে একদম ফিজিক্স প্রাকটিক্যাল বইয়ের মতো পড়া এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা.
প্রথমে এই দুটি জিনিস করতে মন খুব চঞ্চল হতো কিন্তু মনকে শাসন করে অভ্যেস চালিয়ে যেতাম. ফল পেলাম 15 দিনে… কিভাবে? চলুন আজ আলোচনা করি.
আগমনীর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি, অতিমারীর করাল গ্রাসের ফাঁক থেকে উজ্জ্বল নীল আকাশ আর কাশবন কিন্তু ঠিক জানান দিচ্ছে যে আনন্দময়ী আসছেন.
দুর্গার এই নবরাত্রির নয়টি রূপ যে কতখানি রূপক ধর্মী এবং সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের ঝামেলার যে কত ভালো সমাধান দিতে পারে তা আমাদের ভাবনার বাইরে, শুধু একটাই ব্যাপার, একে লাল শালু তে মুড়ে ঠাকুরের আসনে রেখে দুবেলা ধূপধুনো না দেখিয়ে ভালো করে পড়ুন, মার্কার পেন দিয়ে হাইলাইট করুন, নিজের প্রশ্ন গুলো নোট করুন, আর হ্যাঁ স্নান করে পরিষ্কার জামাকাপড় না পরে চন্ডীতে হাত দেবো না এরকম প্রেজুডিস থেকে দয়া করে বেরিয়ে আসুন, এই বইটি আমাদের সমস্যা সমাধানের গাইড বুক সুতরাং পুজো টা ওভাবে না করলেও হবে.
প্রথমত জানাই শ্রী শ্রী চন্ডী কে ব্যাখ্যা করার ধৃষ্টতা আমার নেই, শুধু নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি যাতে কিছু মানুষের কাজে লাগে. নবদুর্গার নয়টি রূপ কে আমরা দুর্গা নবরাত্রি এবং বাসন্তী নবরাত্রি তে পূজা করি, এঁরা হলেন শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘন্টা, কুশমন্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়ন, কালরাত্রি, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রী. মায়ের এই প্রতিটি রূপ আমাদের দৈনন্দিন কাজের অথবা মনে লালন করা বিশেষ কোনো ইচ্ছার এক একটি ধাপ.
শৈলপুত্রী : ধরুন আপনি মোটেও রান্না পারেন না, কিন্তু ইচ্ছে আছে একদিন দুর্দান্ত রেঁধে সবাইকে এবং নিজেকে খুশি করে দেবেন. কিন্তু ওই ল্যাদ কাটিয়ে, গরমে ঘেমে আর রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার motivation জাগাতে পারেন না. এখানেই শৈলপুত্রীর শক্তি চাই যেটা বাইরে কোথাও নয় আপনাদের মধ্যেই আছে, শৈল মানে পাহাড় প্রমাণ ল্যাদাশুর কে বধ করে রান্না ঘরে ঢুকে পড়ুন দেখি, জয় মা শৈলপুত্রী.
ব্রহ্মচারিণী : রান্নাঘরে ঢুকে তো পড়লেন কিন্তু একদিনের মধ্যে তো কিছু শেখার নয়, একদিনে তো আপনি আপনার পাকা রাঁধুনি হওয়ার বাসনাকে সফল করতে পারবেন না, তারজন্য রোজ রান্নাঘরে গিয়ে রান্না প্রাকটিস করতে হবে, রান্নার সমালোচনা, ব্যাঙ্গ, হাসাহাসি, প্রশংসা কে চুপচাপ ফিডব্যাক হিসেবে নিয়ে মাটি কামড়ে পরে থাকতে হবে, নিজের ভেতরের ব্রহ্মচারিণীকে জাগানো একমাত্র আপনার দ্বারাই সম্ভব, লেগে থাকুন মশাই.. আপনার হবেই.
চন্দ্রঘন্টা : বেশ কয়েক সপ্তাহ রান্নার পর হাত বেশ খুলেছে, প্রশংসা পাচ্ছেন, কিন্তু please গ্যাস খেয়ে যাবেন না, অমুকদা আপনার হাতের বিরিয়ানী খেতে চেয়েছেন বলে তাকে পটাতে গিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে ফেলবেন না, তাহলেই মাটি, আবার গোড়ার থেকে শুরু করতে হবে, বেশিরভাগ মানুষ এখানে এসেই ওই flash light দেখে ঘেঁটে যায়, মা চন্দ্রঘন্টা আপনাদের এই stage টি identify করতে এবং দিকভ্রষ্ট না হতে সাহায্য করুন.
কুশমন্ডা : এই ধাপটি হলো নিজের ফিডব্যাক গুলোকে পসিটিভ ভাবে নিয়ে নিজেকে fine tuning করার ধাপ. নতুন রেসিপি নিজের ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে তৈরী করুন, youtube এ ভিডিও দেখে নিজেকে আপগ্রেড করুন, আপনার ‘কু’ গুলোকে ফিল্টার করে নিজেকে চমকে দিন দেখি, জয় মহামায়া.
স্কন্দ মাতা : পুরানে আছে স্কন্দ দেবসেনাপতি কার্তিক এর নাম. এই পর্যন্ত আপনার রন্ধন গুণের যে বিকাশ ঘটছে তাকে সন্তানের ন্যায় আগলে রাখুন, আদরে ভরিয়ে রাখুন, রেলিশ করুন নিজের এই সন্তান সম ক্রিয়েটিভিটি কে. ঠিক যেমনটি মা দুর্গা কোলে কার্তিক কে বসিয়ে করে থাকেন, আজ্ঞে হ্যাঁ, কোলে বসিয়ে কারণ গুনটি এখনো কুঁড়ির পর্যায়ে আছে, একে মাটিতে নামলে কেউ মাড়িয়ে দিতে পারে.
কাত্যায়নি : আপনার যে fine tuning করা রন্ধন শৈলী টি অর্জন করেছেন এবার তাকে দেশ ও দশের কাজে লাগান, মা কাত্যায়নির মতো নতুন নতুন রান্না সবাইকে খাওয়ান, নিজে খান, এই পর্যায়ে যে প্রশংসা গুলি পাবেন তা ভীষণ খাঁটি, so enjoy the fruit of success.
কালরাত্রি : আপনি যদি পাড়ার বা পরিবারের সেরা রাঁধুনি হতে চান তাহলে এই কাত্যায়নী তে পৌঁছনোর পরে আপনি মোটেও এগোতে চাইবেন না, কিন্তু আপনি যদি রাজ্য বা দেশের সেরা রাঁধুনি হতে চান তাহলে মহামায়া কালরাত্রির আরাধনা করতেই হবে. মনের সব দন্দ্ব, পরিশ্রম করার শক্তি এবং এ যাবৎ সব প্রশংসা ভুলে মহাশূন্য তে নিজেকে surrender করতেই হবে. যদি পরের ধাপের জন্য আপনার যোগ্যতা থাকে, তাহলে নিজেই কালরাত্রি অতিক্রম করবেন নিজের শক্তিতে. জয় মহামায়া.
মহাগৌরী : কালরাত্রি পেরোনোর পরে নিজের আরো দক্ষতা বাড়ানো এবং success handling করতে পারলেই আপনার প্রতিভা মহাগৌরীর ন্যায় কাঁচা সোনার রং ধারণ করবে. আপনার উজ্জ্বলতা সেই মহাঅষ্টমীর ঢাকের বাদ্দি.. আহা.. নিজেই নিজেকে নিয়ে খুশি থাকবেন তখন, সমুদ্রস্নানের উজ্জ্বলতা.
সিদ্ধিদাত্রী : সন্ধিপুজার সময়ে আপনার অন্তরের মলিনতা নামক মহিষাসুরকে শেষ করুন, মহিষ এর মাথা নিয়ে মোটেই কেউ বাস্তবে যুদ্ধ করেনি, নিজের stubborn nature এর রূপক হলো মহিষাসুর.. বধ করুন তাকে, আপনার সিদ্ধিদাত্রী বিজয় মালা নিয়ে আপনার জন্য প্রতীক্ষারত.
জয় মহামায়া