Homeগুরুত্বপূর্ণনলডাঙ্গায় সাংবাদিক হওয়ার হিড়িক!

নলডাঙ্গায় সাংবাদিক হওয়ার হিড়িক!

নাটোর নিউজ নলডাঙ্গা: একটি রাষ্ট্র ও সমাজের অন্যতম সম্মানজনক পেশা হচ্ছে সাংবাদিকতা। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে,সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা গেছে,নাটোরের নলডাঙ্গায় ইদানিং সাংবাদিক হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

কতিপয় কিছু নামধারি সাংবাদিক আইডি কার্ড এনে কোমরে ঝুলিয়ে,গাড়ীর সামনে প্রেস লিখে উপজেলায় ঘুরঘুর করছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে এদেরকে দেখা যায়। নামধারী এসব সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন অর্পকমের সাথে জড়িত বলে জানা যায়।

আবার অনেকে নিজের মিডিয়াই খবর প্রকাশ না করে প্রতিদিনের একাধিক ঘটনা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। এসব স্ট্যাটাস কিছু কিছু ফেসবুক বন্ধু লাইক কমেন্ট করে বিরুপ মন্তব্য করে কথিত সাংবাদিকদেরকে উৎসাহ দিচ্ছে। এরা কারো কারো সাথে বা সন্মানী ব্যক্তিদের সাথে সেলফি বা ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে নিজেদেরকে বড় সাংবাদিক প্রচার করে।

গণহারে বেড়ে যাওয়া লেবাসধারী এসব লোকেরা রাস্তায় বাহির হলেই বীরদর্পে অকপটে পরিচয় দেয় আমিও সাংবাদিক। যার ফলে সাধারন মানুষ সংবাদকর্মীদের এখন উপহাস করে অকপটে বলে ফেলেন ঐ যে সাংঘাতিক। তাছাড়া এসব কথিত সাংবাদিকদের ফাঁদে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

বিভিন্ন গ্রামে মাদক,নারী ঘটিত বিষয়সহ ইত্যাদি ঘটনায় বিশেষ সুবিধা নিতে সাংবাদিকতায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে এক শ্রেণির ব্যাক্তিরা। তারা মনে করেন,সাংবাদিক হলেই প্রশাসনে ও পুলিশ বিভাগে বিশেষ সুবিধা নেওয়া যায়। যার ফলে এ পেশায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে তারা।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোটরসাইকেলে প্রেস লিখে সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন বেশ কিছু কার্ডধারী সাংবাদিক। অনেকে দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা,নিউজ পোটাল আইডি কার্ড সংগ্রহ করে সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আসলে তারা কি সাংবাদিক না সাংঘাতিক!অনেক মহলের প্রশ্ন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়,নিজেদের অনেক অর্পকম আড়াল করতে অনেকে হয়েছেন কার্ডধারী সাংবাদিক। তাদেরকে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে,বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। এদিকে সাংবাদিক পরিচয় বহনকারী কার্ডধারী সাংবাদিকরা স্থানীয় গন্যমান্য কয়েকজন ব্যক্তির সাথে সখ্য গড়ে তুলেছে । এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহল এসব কার্ডধারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

হলিদাখলসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক,এস এম আরিফুল হক বলেন, আবার পোস্টধারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সাংবাদিকতার মতো নিরপেক্ষ পেশায় নাম লেখাচ্ছেন! বিষয়টা সাংঘর্ষিক বটে। কেউ কেউ দুটি বাক্য লিখলে পাঁচটি ভাষাগত ভুল করেন ,তাঁরাও এখন সাংবাদিক! সাংবাদিকতা পেশার যে কতগুলো “Code of ethics” রয়েছে সে বিষয়ে এসব সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তিদের নূন্যতম জ্ঞান রয়েছে বলে মনে হয় না। বেশির ভাগই ব্যক্তি বিশেষের গৃহপালিত সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। সাংবাদিকতা পেশার প্রতি যে সম্মানবোধ ছিলো সেটা পূনঃরুদ্ধার করতে এদের লাগাম টানার এখনই সময়।

নলডাঙ্গার শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ তোতা বলেন,সাংবা‌দিকতা মহান পেশা। এই পেশাটা‌কে যত্রতত্র পাত্রস্ত ক‌রে নষ্টামীর পর্যা‌য়ে নি‌য়ে যাওয়া হ‌চ্ছে‌। সমা‌জের কিছু মানুষও এর দায় এড়া‌তে পা‌রে না। মূলধারার সাংবাদিক ও প্রশাসনের ঐক্যমত থাকা জরুরী। যে হারে নাটোরের নলডাঙ্গায় কার্ডধারীদের দৌরাত্ম বাড়ছে তাতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সাইকেলে বা গাড়ীতে “PRESS” লেখা নিষেধ আরও কয়েক বছর আগে থেকেই। শুধু মিডিয়ার নাম লিখতে পারবেন। মূল ধারার সাংবা‌দিকরা মোটরসাই‌কে‌লের সাম‌নে(প্রেস) লিখে না। কোম‌রে কার্ড ঝু‌লি‌য়ে প্রশাস‌নের সাম‌নে ভাব ধ‌রে না। সাধারণ মানুষ‌কে নি‌জের প‌রিচয় উচ্চক‌ণ্ঠে সাংবা‌দিক উ‌ল্লেখ ক‌রে না।
মূলধারার সাংবা‌দিক‌দের লেখনী ও কাজেই প্রমান ক‌রে তার প‌রিচয় কি। নামসর্বস্ব ভুঁই‌ফোঁড় গণমাধ্যম এর প‌রিচয় দি‌য়ে টাকার বি‌নিম‌য়ে প্রেসকার্ড অর্জন ক‌রে অনেকে বিপথগামী হ‌য়ে যা‌চ্ছে। এরা বু‌ঝে না বু‌ঝে নি‌জেদের অ‌তির‌ঞ্জিত উপস্থাপনা কর‌তে গি‌য়ে গণমাধ্যম‌কে বিত‌র্কিত ক‌রে দি‌চ্ছে।

দৈনিক খোলা কাগজের নলডাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী বলেন,যারা সাংবাদিকতায় আছেন তাদের অনেকেই কোন কোন সময় একটা কার্ড এনে দেওয়ার জন্য কাছের মানুষের রিকুয়েস্ট পান। কিন্তু সাংবাদিকতা যে কার্ডে নয় বাই নেইমের নিউজে পরিচয় তা বুঝানোও মুসকিল। মূল ধারার সাংবা‌দিক‌দের দেখ‌লে প্রশাসন ঠিকই আন্দাজ কর‌তে পা‌রে। সাংবা‌দিকরাও যু‌ক্তিসঙ্গত বিষয়া‌দি নি‌য়ে প্রশাস‌নে কর্মরত ব্য‌ক্তি‌দের সা‌থে আলাপ ক‌রেন। কিন্তু,ইদানিং নলডাঙ্গায় সাংবাদিক হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

দৈনিক আজকের পত্রিকার নলডাঙ্গা প্রতিনিধি রানা আহম্মেদ বলেন, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক চালানোর সঠিক নিয়ম জানে না,তারা যদি জাতির বিবেক সেজে নাম সর্বস্থ রেজিঃষ্টেশন বিহীন অনলাইন পত্রিকার কার্ড নিয়ে সমাজের কোন উপকারে আসবে সেটা ভাবনার বিষয়! সাংবাদিকতার মত মহৎ এ পেশাকে পুঁজি করে যারা ব্যাক্তিগত সুবিধা আদায় করছে,তাদের তালিকা তৈরি করে আইনের আওতায় আনা দরকার। সাংবাদিকতা করতে হলে অবশ্যই নিয়ম কানুন মেনে করুন।

দৈনিক আজকের সংগ্রাম পত্রিকার নাটোর প্রতিনিধি শতক আরিফ বলেন,গুরুত্বপূর্ণ কোন ক্ষেত্রে তাদের কোন ভূমিকা না থাকলেও বিভিন্ন প্রোগামে কার্ডধারীদের উপস্থিতি ব্যাপক,এক কথায় তারা কর্পোরেট সাংবাদিকতায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কার্ডধারীরা কোন জনদূর্ভোগ বা এলাকার সমস্যা নিয়ে তারা কোন সংবাদ প্রকাশ করেনা। তাদের কাছে নেই কোন তথ্য নেই কোন উপাত্ত। তবুও তারা সাংবাদিক।

ডিবিসি টিভির নাটোর প্রতিনিধি,পরিতোষ অধিকারি বলেন,অননুমোদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল,আইপি টিভি গুলো অনভিজ্ঞ ধান্দাবাজ প্রতিনিধি নিয়োগ দিচ্ছে,তাতে অবিলম্বে গণমাধ্যমগুলোর উপরে আস্থা হারাবে জনগণ। এখনই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ জরুরী প্রয়োজন।

নাটোর ইউনাইটেড প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মাহাবুব হোসেন বলেন,নাম সর্বস্ব অনলাইন পত্রিকার কারনে সাংবাদিক নামধারিদের দৌরাত্ব বেড়েছে। এতে করে প্রকৃত সাংবাদিকরা কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ কার্ডধারি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মাদক ব্যবসাও করছে। অসাংবাদিকদের কারনে মহান পেশা কুলষিত হচ্ছে। এদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments