কবি শুভম আমিন এর ‘ বামিয়ান ‘
বামিয়ান
শুভম আমিন
সন্ধ্যা নামছে বামিয়ানের বুকে। অস্তগামী সূর্যের আলোয় ঝলসে উঠছে দূরের হিন্দুকুশ পর্বতের সারি। প্রাচীন গুহামুখে এসে পড়েছে গোধূলির শেষ আলো, বাতাসের টানে এধার থেকে ওধারে সরে যাচ্ছে হ্রদের জল। এত মোহময় সৌন্দর্য, তবু চারপাশে এক অপার নিস্তব্ধতা। যেন কোন বিভীষিকা দেখে আঁতকে উঠে সহসা নীরব হয়ে গেছে প্রকৃতি। নির্জন প্রান্তরে শুধু স্পন্দন এক মৃদুমন্দ বাতাস। ধ্যান শেষে উঠে দাঁড়ালেন সৌম্যকান্তি সেই মহামানব। চারপাশ চূর্ণ হয়ে গেছে গ্রেনেড, গোলা, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে, ছড়িয়ে আছে জগৎশ্রেষ্ঠ শিল্পপ্রতিমার মুখ, দেহাবশেষ। তবু রক্তাক্ত দেহে ফের উঠে দাঁড়ালেন তিনি। অন্ধকার ক্রমে গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে, গোধূলির আলো গ্রাস করছে বারুদের গন্ধমাখা ক্রূর অন্ধকার। সেই অন্ধকারের মধ্য থেকে এসে দাঁড়ালো এক ছায়াশরীর। তিনি চিনতে পারলেন, মার। বিদ্রূপের হাসি হেসে মার বললে, ‘ কেমন লাগছে আজ সিদ্ধার্থ? বহু শতাব্দী পূর্বে আমায় অক্লেশে হারিয়ে ভেবেছিলে আমি শেষ হয়ে গেছি? মার শেষ হয় না সিদ্ধার্থ। ঐ দেখো বামিয়ানের চূড়ায় আমার বিজয়কেতন, দ্যাখো দ্যাখো, গ্রেনেডে ছিটকে চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া তোমার অবয়ব, দ্যাখো দ্যাখো, ভালো করে চেয়ে দ্যাখো। আজ তোমার হার মানার দিন, বুদ্ধ। শেষ কথাটা বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো মার, যেন চুরমার হয়ে গেলো স্তব্ধ উপত্যকা।
মৃদু হাসলেন মৈত্রেয়। সস্নেহে চেয়ে বললেন, ভূপতিত, কিন্তু পরাজিত কি? পরাজয় তো সেদিন হবে, যেদিন তোমার চোখে চোখ রেখে মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহসটুকু আর থাকবে না। সেদিন বরং এসো। ঘোর অন্ধকারের দিকে চেয়ে দৃঢ়পদে নামতে লাগলেন মৈত্রেয়, তমিস্রাঘন শৈলমালার বুকে মন্দ্রস্বরে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো, ‘বুদ্ধম্ শরনং গচ্ছামি, ধম্মম্ শরণং গচ্ছামি, সঙ্ঘম্ শরণং গচ্ছামি…’