এক প্রত্যয়ী মা ও মেয়ে- অপর্ণা চক্রবর্তী
ছবিটির দিকে তাকিয়েই ছিলাম। কোনো কিছু যখন আমায় মুগ্ধ করে তখন মুগ্ধতার রেশ কাটতেই চায় না।অবারিত সবুজের মাঝে উঁচু নীচু রাস্তা। হেঁটে যাচ্ছে সামনে মা আর মেয়ে। বহুদিন এমন ফাঁকা প্রান্তর দেখিনি আমি।
এই মা কে আমি চিনি, মেয়েটিকেও। কিন্তু এই ছবিতে মনে হচ্ছে ওরা কোনো গল্প থেকে উঠে এসছে। আমি যে গল্পের শুরুতে এমন দুটো চরিত্র কে বেছে নিয়েছি। মা আর মেয়ের গল্প।
যে শিশুটি তার মায়ের গর্ভে প্রতিপালিত হয়ে যখন ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক সেইদিন থেকে তার একটি অলিখিত উপন্যাস রচনা শুরু হয়। এই উপন্যাসের স্থায়িত্ব কাল সম্পূর্ণ অজানা। কিন্তু যেটুকু সময় শিশুটি তার শৈশব, বাল্য,কৈশোর,যৌবন,তারুণ্য,বার্ধক্য নিয়ে এগিয়ে যাবে প্রতিদিনের পাতায় লেখা হবে নূতন নূতন ঘটনা যা তার মায়ের সাথে কিচ্ছু মেলেনা।
জীবনের এই যে বাঁক, এই যে ওঠা নামা এটা অবশ্যম্ভাবী। হতেই হবে। কখনো মেঘ কখনো রৌদ্র। এক অবিমিশ্র তালে চলেছে জীবনের সাথে। আমার হৃদয় স্পন্দিত হয়, একবার উঁচু পিকে একবার নীচু পিকে।
আমার অনেক বন্ধু অনেক সময় লেখে এই অতি নিষ্ঠুর বাস্তব কথা। মৃত্যুর কথা আমরা স্মরণে রাখি না। মেতে উঠি নানা কাজে।
আমার কথা, মৃত্যু তো নিশ্চিত, জন্ম অনিশ্চিত। যা নিশ্চিত তার কথা ভেবে ভেবে আমি বেঁচে থেকেই প্রতিদিন মরে যাবো? কেন?
আমি সেই তাদের সাথে একমত নই।
জীবনের একটা পর্যায়ে বার বার আমি মৃত্যু চেয়েছি। মরতেও গেছি। আবার যখন ধাতস্থ হয়েছি, তখন জীবনের প্রতি সেকেন্ড কে পাগলের মত ভালবেসেছি।
একটা এবরো থেবরো পথে যখন হাঁটার প্রস্তুতি নেবো কীনা ভাবছি আর ভেবে আকুল হচ্ছি, তখন ই ১৬ বছরের কন্যাটি এসে বললো, মা পারতেই হবে মা। পারতেই হবে। পথ তোমার যাইই থাক, গন্তব্য তুমি যখন জানো তখন যেকোনো পথে এগুতে হবে তোমাকে। দরকারে ট্র্যাক চেঞ্জ করবে। কেউ তোমায় জায়গা দেবে না মা। তোমার জায়গা তোমায় করে নিতে হবে।
সেই দীর্ঘ পথের যাত্রায় আমরা চলেছি। কঠিন থেকে কঠিনতর কিন্তু অসম্ভব নয়। এই বাণী অন্তরে নিয়েই চলেছি।
ছবিটি আমার বোন নূপুর আর ওর ছ’বছর বয়সী কন্যা রিশার।
সকালে ঘুম ভেঙ্গে ই এই ছবিটা দেখলাম। নূপুরের লক্ষ লক্ষ ছবির ভীড়ে এই ছবিটি আমার হৃদয় কেড়ে নিলো।
এক প্রত্যয়ী মা আর মেয়ের ছবি।