আমি পরীর সাথে লিলিথের মিল পাই – রানা নাগ
আমি পরীর সাথে লিলিথের মিল পাই। যে লিলিথের সৃষ্টি হয়েছিলো ঈভেরও আগে। আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থগুলো যদি বিবেচনা করি তবে বলা যায়, ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মে যদিও এডাম-ঈভের কথা বলা হয়েছে কিন্তু এই দুটি ধর্মেরই আদিরূপ হল ইহুদী ধর্ম আর সেই ইহুদী ধর্মের ধর্মগ্রন্থ ‘বুক অব জেনেসিস’ আর সেখানে বলা হচ্ছে যে কথিত প্রথম মানবী ইভের আগে আরেক নারীর অস্তিত্বের কথা। যিনি আদমের সাথে সাথেই আদমের মতোই মাটির তৈরি এক নারী। তিনি ঈভের মতো আদমের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি হননি। তিনিই ছিলেন লিলিথ।
মূলত লিলিথের এই চরিত্রটি গল্পে পরিণত হওয়ার পেছনে যে ঘটনাটি প্রচলিত সেটি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার প্রাথমিক উদাহরণ। বলা আছে যে ,এডাম ও লিলিথের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু যৌনমিলনের জন্য। নর-নারীর সম্পর্কের সুখের রূপ ভালোবাসা মানে সেক্স যার মাধ্যমে সন্তানাদির সৃষ্টি হয়।কিন্তু নর ও নারীর ভালোবাসাবাসির সেই মধুরতম মুহূর্তেও পৃথিবীর প্রথম পুরুষ সদাই এগিয়ে থাকতে চাইতেন নারীর চাইতে।তিনি সর্বদাই উপরে থেকে যৌন কর্ম করে যেতে চান। মানে মিশনারি পজিশনে আরকি! এবং এজন্য তিনি বল প্রয়োগেও পিছ-পা হন না। সৃষ্টির শুরুতেই কেন তার এমন ধারণা হল যে, তিনিই শ্রেষ্ঠ? এর বিপরীতে লিলিথের যুক্তি হল তারা দুজনই যেহেতু একই মৃত্তিকাজাত এবং একই সময়ে সৃষ্টি কাজেই আদমের আধিপত্য তিনি কেন মেনে নিবেন? ফলস্বরূপ লিলিথকে পেতে হয়েছে অবাধ্যতার জন্য বহুমুখী শাস্তি অনন্তকালের জন্য। সম্ভবত একারণেই পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধর্মে ও নানান রাষ্ট্রীয় আইনে নারীর সেক্সকরার বিষয়টিকে তিরস্কারের মাধ্যমে প্রায় আইনীরূপ দেয়া হয়েছে।
তো আমি কেন পরির সাথে ঘটমান এইসমস্ত ঘটনার বিপক্ষে? এই মেয়েটি যুদ্ধ করেছে সেই কৈশোর থেকে,তাঁকে প্রচলিত সামাজিকতা ধরে রেখে পরিবারে বেঁধে রাখবে এমন কাছের কেউ ছিলোনা। নিজেকে পুরুষের সমান ভেবে সব করেছে, সে নিজে জীবনকে উপভোগ করছে যেমন ঠিক ধনবান শক্তিমান পুরুষরা করে এই সমাজে, আর এইসব করতে গিয়ে সে দেখেছে নানান লাভ। জীবনটা উপভোগের, সকল লাভ সে লাভ করেছে।তাঁর দোষটা কই? দোষ একটাই, এই সমাজে ধর্মের ও রাষ্ট্রের নারী স্বাধীনতা বিরোধী নানান আইনকে সে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মত জীবন যাপন করতে চেয়েছে।
সূত্রঃ লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে।