পাঁচু কাকার ৩০ টাকায় বিরিয়ানি ভক্ষন
দেবাশীষ সরকার
প্লেটটি লইয়া অনেক ক্ষন ধরিয়া চাহিয়া রহিলো খাবার গুলির দিকে পাঁচু কাকা। হলুদ চিকন চাউলের ভাতের মাঝে বেশ কয়েক টুকরো ছোট ছোট মাংসের অস্তিত্ব, খাইতে অবশ্য খারাপ লাগে না কাকার। দাঁতের নিচে হাড়ের স্বাদটা রসাইয়া রসাইয়া অনেকটা সময় লইয়া চিবাইতে চিবাইতে সবটুকু নিংড়াইয়া লয় যতক্ষন না গুড়ো হইয়ে মিশিয়া যায়।
৩০ টাকায় এমন খাবার লইয়া খুব খটকা ছিলো কাকার। কিন্তু কি করিবে! উপায় তো আর নাই। আশ্বিন বাউলের সাথে ঢাকা বেড়াইতে আসিবার পথে পকেটমার সকল কিছু লইয়া গিয়াছে। বাধ্য হইয়া পেটের ক্ষুধা নিবারনের উদ্যেশ্যে পথের পাশের ঝুপড়িতেই বসিয়া পড়িতে হইলো। তবু ভালো এলাকার রিক্সাওয়ালা কালু ঢাকায় রিক্সা চালাইতেছে, হঠাৎ দেখা হইয়া যাওয়ায় সে জোর করিয়া খাওইতে লইয়া আসিয়াছে।
বহু বৎসর পূর্বের কথা কাকার মনে পড়িতেছে। প্রথম যখন খবরের কাগজ লইয়া সব খুটি নাটি সকল খবর পড়িতো তখন বিভিন্ন মরা প্রাণীর মাংশ, এমনকি কুকুর, বেড়াল, মানুষের ফেলিয়া দেওয়া উচ্ছ্বিস্ট পচা খাবারও নাকি রাস্তার ধারের খাবার ঝুপড়ি গুলিতে কম দামে বিক্রয় হইতো। বহু আগের কেন হইবে! এই তো সেই দিন পেপারে লেখা হইলো কোন ছাত্রাবাসে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নাকি শিয়ালের মাংশ ধরা পরিয়াছে। বাসের নিচে চাপা পড়িয়া মারিয়া যাওয়া কুকুরটিকেও নাকি চামড়া ছিলিয়া খাসির মাংস বলিয়া ঝুপড়িতে হরহামেশাই বিরিয়ানি করিয়া বিক্রয় করা হইতেছে। এসব খবর পড়িতেই প্রথম প্রথম বমি আসিতো, বাড়ির ভালো ভালো খাবার বিস্বাদ লাগিতো, রুচতে চাহিতো না কোন খাবার কিন্তু নিজেই আশ্চর্য হইয়া যাইতেছে আজকে নিজের পরম তৃপ্তি দেখিয়া। আঙ্গুল গুলো চাটিতে চাটিতে হাত ধুইয়া ঝুপড়ি হইতে বাহির হয় পাঁচু কাকা আশ্বিন বাউল আর কালু।
পানের দোকানের সামনে গিয়ে কালু ৩ টাকা দামের ৩ টা সিগারেট নেয়। পরম মমতায় চোখ বন্ধ করিয়া সিগারেটে টান দেয় পাঁচু কাকা। চোখ বন্ধ করিয়াই কালুর কথা শুনিতে থাকে কাকা। বেশ দার্শনিকের মতো কালু বলিতে থাকে.. কাকা শুনো যকুন আমি পথম ঢাকা আনু তকন খুব সমস্যা হচ্চিলো যানো! কোনটি কিচু খাতি পারি ন্যা, কেমুন কেমুন লাগে, তকুন আমার সাতেই থাকে বুজ্যতে পারিছেও মানিক নাম, উই কোলো তোর টিভিত ডিসকোভারি চ্যানেল দেকা লাগবি। বেয়ার গ্রিল নামে একটা মানসের বিভিন্ন সব কাজ কারবার দেকায়। মানুষ বিপদে পোলে কি কোরে বাঁচে, কি খায়, কি খাওয়া যায়, এসব দেকায়। তো সেই থ্যাকে রাতে খালি বেয়ার গ্রিলের অনুষ্ঠান দেকি। দেখতে দেকতে একুন সব খাবারেই খুব রুচি, কোন খাবারই আর খাতি খারাপ লাগে না। শোন বাউল আমারও তো ওই রকম বিপদের মদ্যেই আছি, কোন রকম জীবন বাঁচায় বাড়িত টেকা পাটাতে হয়, বেটা- বিটির পোড়াশুনার খরচ, বুড়া বাপ- মা সবাক তো দেকতে হোবি না কি কও!
বেয়ারগ্রীল নামের মানুষটা আর যাই করুক এই আমাদের মতো গরীব মানস্যের জন্য একটা দৃস্টান্ত বুজল্যে বাউল। অনেক ক্ষন পেচাল পাড়িয়া থামিলো কালু। কাকা তখন ভাবিতেছে আহা আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নত হইয়াছি, ৪১ সাল নাগাদ উন্নত রাষ্ট্রে পদার্পন করিবো, আর ৭৫ সাল নাগাদ… যাহাই হউক এইসব উন্নয়ের ইতিহাসে কালুদের জীবনের ভুমিকা বা স্থান কি হইবে সেই কথা কে লিখিবে?
আশ্বিন বাউলেরও তখন মনে পড়িতেছে হ্যাঁ সত্যিই তো সেই বেয়ার গ্রিলকে সে দেখিয়াছে। বিভিন্ন দুর্গম জায়গায় বিপদের মধ্যে কিভাবে বাঁচে তা দেখায়। সব কিছু খায়, কোন কিছুতে অরুচি নাই, বাঁচাটাই আসল। কালুর কথা মানিয়া লইয়া মনে মনে বলে আসলে আমরাও তো সেই রকমই দিন পার করিতেছি বল? আমাদের খাওয়া লইয়া বাছ বিচার করিলে চলে!
প্রকাশ্যে বলিলো কালু আমরা বাড়িৎ যাবো কি কোরে রে ভাই সব তো লিয়া গেছে পকেটমার। কয়ডা টেকা ধার দেও বাড়িৎ যাই। কালু বলিলো আরে বাউল ও কাকা! তোমরা আমার এলাকার মানুষ এতো টেনসন করিচ্চো ক্যা? আমি তো আর মোরে যাইনি…….
চলবে…..