পাঠ-প্রতিক্রিয়া
‘মুষ্টিবদ্ধ সেই হাত’- লোকমা সৃজন
ভালো রাজার জয় আর দুষ্টু রাজার পরাজয়। সুখের সাম্রাজ্যে সকলেই সুখি। কিংবা, দৈত্যপুরীর দাপটে দৈত্যের বিনাশ কোনো অতি সাধারণ একজনের হাতে। এই তো রুপকথার গল্প। শেষটায় গিয়ে সবাই খুশি। প্রথম প্রথম যখন রুপকথার বইগুলো পড়তে আরম্ভ করি তখন প্রতিটা বই হাতে নেয়া থেকে রাখা ওবদি কেবল একটা প্রশ্নেই আটকে যেতাম– গল্প গুলোর লেখক কে? যদিও এখন বুঝি এর উত্তরটা কারো জানা নেই। অনেক অনেক বছর ধরে অনেক অনের মানুষের আশা- আকাঙ্ক্ষা- স্বপ্ন এই সব গল্পে রূপ নিয়েছে। ‘ মুষ্টিবদ্ধ সেই হাত ‘ বইটি আমার কাছে তেমনই এক প্রামাণ্য রূপ। শক্তিশালী শব্দের প্রলেপ লাগানো ধনীদের শোষণ আইনের বিপরীতে সাধারণের রুখে দাঁড়ানোর গল্পটা এখানে স্পষ্ট। তবে সাধারণের এই বিপরীত অবস্থান তো আর একদিনে আসে নি। বহু নিরপরাধের চোখের জল, বহু বছরের স্বার্থত্যাগ ধীরে ধীরে সাধারণ মেহনতি মানুষের মনে জন্ম দেয় রাগ, ক্ষোভ, শেষে মুক্তির শপথ। আর শোষণে ক্ষত- রক্তাক্ত মেহনতিদের এই মুক্তির শপথের আড়ালের গল্প গুলো যেই ইতিহাস গড়ে তুলেছে তারই এক সরল প্রকাশে সর্থক এ বই। জাকির তালুকদার আঙ্কেল ভারত উপমহাদেশে বৈদেশিক শাসন এবং তাদের তেল মালিশ করা কিছু ভারতীয় গোলামেরা ( রাজা) যে ভাবে লুট করেছ সাধারণ মেহেনতিদের সম্পদ এবং চালিয়েছে অরাজকতা, সেটাই তিনি নিজস্ব ভঙ্গিমায় প্রকাশ করেছেন। স্বীকার করতেই হয় বইটিতে নেয়া ওনার ছোট্ট ছোট্ট কিছু বাঁক মনে গেঁথে রাখার মতো। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে। আমার আরো একটা ভালো লাগার জায়গা এই যে, সন- তারিখের ঝামেলা বা শোষকদের নামের বাজার বইটিতে নেই।
এই উপ ভারত মহাদেশে বৈদেশিক শাসন বা আফ্রিকানদের ওপর চালানো চরম নির্যাতন বা আমেরিকার কালো নাগরিকদের ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহারের সেই অমানবিক আইন। সকল রুপকথার গল্পের মতোই এসব ইতিহাসের সারমর্ম আমার কাছে একটাই– গরিবের ওপর ঐশ্বর্যে-মোড়া ধনীদের অত্যাচার । যেখানে গরিব মেহনতিদের আবিষ্কৃত ঐশ্বর্যই লুটে – লুটে এক শ্রেণির মানুষ হয়ে উঠেছে ধনী, ঐশ্বর্যবান। যদিও মেহনতিরা রুখে দাঁড়ায়েছে তবে ঘড়ির কাঁটা ঘুরে আবারো ফিরে এসেছে ধনীদের দাপট, যা আজও চলমান। আমার সম-সাময়িকদের আমন্ত্রণ রইলো ‘মুষ্টিবদ্ধ সেই হাত’ বইটি পড়ার। ঘড়ির কাঁটা আমাদের প্রয়োজনেই ঘুরে। কিন্তু ইতিহাসের এই চক্রাকার রীতি এবার পৃথিবী ধ্বংসের প্রহর গুনছে। জাকির তালুকদার আঙ্কেলের এই বইটি হয়তো আমার মতো নতুনদের সেই একই চক্রাকার ভুল না করার সতর্ক সংকেত দিতে পারে। আমি স্বপ্ন দেখি সামনের আমাদের লড়াইটা হবে আলোক রশ্মির মতো সোজা। একবার পৃথিবীর ঐশ্বর্য সাধারণের হাতে পৌঁছানো মানে চোখের জলের দিন শেষ। গ্রাম, শহর, দেশ ছাপিয়ে পৃথিবীতে এক নতুন পৃথিবী। রুপকথার পৃথিবী। সেখানে আমাদের মুষ্টিবদ্ধ হাতে পিষে মরবে সব অমানুষ স্বৈরাচার ধনীর দল।
– লোকমা সৃজন
২/৮/২০২১