Homeগুরুত্বপূর্ণনাটোর জেলা আওয়ামীলীগ দুই শিবিরে বিভক্ত, চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি

নাটোর জেলা আওয়ামীলীগ দুই শিবিরে বিভক্ত, চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি

নাটোর নিউজ: নাটোর জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঘোষিত কমিটি নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চালাচালি নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজনা। ঘোষিত এই কমিটি নিয়ে সৃষ্টি হওয়া দু’টি পক্ষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতা হিসেবে অভিযোগ উঠেছে নাটোর- ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে। দৃশ্যত বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে । চলছে একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি।
এদিকে নাটোর জেলা আওয়ামীলীগ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একভাগে এমপি শিমুল একাই তার সাথে রয়েছেন জজ কোর্টের আইনজীবী ও পিপি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ এছাড়া যুবলীগ নেতা এহিয়া । তবে উমা চৌধুরী জলি তার সঙ্গে থাকছেন কিনা তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক কে কেন্দ্র করে নাটোর জেলার আর সকল আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও অপর ২ এমপি, সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি, সাবেক এমপি- মন্ত্রী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান সহ অন্যান্য উপজেলা চেয়ারম্যানরা সংঘটিত থেকে আরেকটি শিবিরে ভাগ হয়েছেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন ঘোষিত কমিটির পদ বঞ্চিতদের অভিযোগ,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সন্ত্রাসের গডফাদার বিএনপি নেতা ও জঙ্গির মদদদাতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সাথে গোপন আঁতাত করে দলে চিহ্নিত রাজাকারের সন্তান ও সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ ঘটানোর হীন প্রচেষ্টায় রাতের আধারে স্বাধীনতা বিরোধীদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি করিয়েছেন। মুলত নাটোরে আওয়ামীলীগের শক্তিশালী সংগঠনকে দুর্বল করতেই প্রতিমন্ত্রী এই হীন ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন বলে দাবী তাদের। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে নবঘোষিত কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ডলার ও সাধারন সম্পাদক সফিউল আযম স্বপন দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলকে অভিযুক্ত করেছেন। ইশতিয়াক আহমেদকে রাজাকার পুত্র বলায় এবার অভিযোগ তোলা হয়েছে খোদ সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে।
রোববার দুপুরে স্থানীয় একটি রেস্তোরায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলকে রাজাকার পুত্র বলে দাবি করেছেন তারা। তারা এর স্বপক্ষে প্রমানও উপস্থাপন করেছেন। স্থানীয় লেখক সুজিত সরকারের লেখা একটি বইয়ে রাজাকারের তালিকায় সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাবার নাম রয়েছে বলে বলা হয়।
এই সংবাদ সম্মেলনে ইশতিয়াক আহমেদ ডলার ও সফিউল আযম স্বপন অভিযোগ করেন,সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল নিজের অপকর্ম ঢাকতে একটি গোষ্ঠিকে দিয়ে নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করানো হয়েছে। সাংসদের প্রত্যক্ষ মদদে সংবাদ সম্মেলনের নামে মিথ্যাচার করা হয়েছে। সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রত্যক্ষ মদদে বিএনপি জামায়াতের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন ব্যবসা ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত করে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল চিহ্নিন্ত রাজাকারের সন্তান উল্লেখ করে নাটোরের রাজনীতি তার পরিবারের হাতে জিম্মি বলে দাবী করা হয়। তিনি নিজে রাজাকারের সন্তান হওয়ার পাশাপাশি জেলা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কমিটিতে তার ১১জন আত্মীয় স্বজনকে পদ দেওয়া হয়েছে। এতে করে নাটোরের রাজনীতি তাদের পরিবারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ায় গতি হারিয়ে ফেলেছে। এ কারনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কমিটি দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও নতুন কমিটি করতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক ক্ষমতা বলে নাটোরের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে গত ২০ জুলাই ২১ সদস্য বিশিষ্ঠ নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি ঘোষনা করে।
স্থানীয় ৪ জন এমপি সহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সকল নেতৃবৃন্দ নতুন কমিটিকে স্বাগত জানালেও বিলুপ্ত কমিটি নানা অপপ্রচার শুরু করেছে তার মদদে। সংবাদ সম্মেলন থেকে বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসাবে উল্লেখ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্ঠিকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অধুনালুপ্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আরিফুর রহমান সরকার ও যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদ সেলিম বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী তারা উপজেলা ,ইউনিয়ন পৌর কমিটি করেন। এছাড়া ওয়ার্ড কমিটিও করা হয়। সম্মেলনের জন্য কেন্দ্রে যোগাযোগও করা হয। কিন্তু করোনার কারনে সম্মেলনের সময় নির্ধারন হয়না। এরই মধ্যে হঠাৎ করে জেলা আহ্বায়ক কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হলে সম্মেলন করার প্রস্তুতি নেওয়ার পরমর্শ দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই ১৯ জুলাই রাতে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে স্বোচ্ছাসেবক লীগের নাটোর জেলা কমিটি ভাসতে থাকে। ওই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে এক রাজাকার পুত্রকে। আমরা বিস্মিত হই কমিটি দেখে। তারা এই কমিটি বাতিল করে ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন কমিটি করার দাবী জানান। যারাই নির্বাচিত হবেন তাদেরই বরন করবেন বলে তারা জানান।
ঢাকায় অবস্থানরত নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের কাছে এবিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা প্রপাকান্ডা বলে দাবী করে বলেন, তার বিরুদ্ধে দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। যারা স্বাধীনতা বিরোধীদের দলের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আওয়ামীলীগকে ধংস করতে চায়। তিনি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের দিকে আঙ্গুল তুলে বলেন, পলক নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করছেন। গত উপজেলা নির্বাচনে সিংড়া উপজেলা পরিষদে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দোয়াত কলম প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। তিনি দলের মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধীদের অনুপ্রবেশ ঘটানোর জন্য কাজ করে চলেছেন। তার ষড়যন্ত্র হিসেবে রাজাকার পুত্রকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বানিয়ে একটি কমিটি করিয়ে এনেছেন। সন্ত্রাসীদের গড ফাদার ও জঙ্গির মদদদাতা বিএনপির রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সাথে আঁতাত করে তিনি আমার বিরুদ্ধে তথা নাটোর আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে নাটোর জেলা আওয়ামীলীগ গঠন করা হয়েছে ।
সাংসদ শিমুল বলেন, তিনি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নেন। সে সময় শহরের আলাইপুর বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গেলে বিএনপি নেতা দুলুর সাথে দেখা হয়। ষড়যন্ত্রকারী সেসময়ের তোলা ছবি দেখিয়ে দুলুর সাথে সখ্যতা থাকার দাবী করছে। যা প্রতারনা ছাড়া কিছুই নয়। অথচ আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দুলু নাটোরে অবস্থান করতে পারেননা।
এবিষয়ে মোবাইল ফোনে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবী করেন। এ প্রসংগে তিনি বলেন, কে দলের মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধীদের অনুপ্রবেশ করাচ্ছে তা রেকর্ড রয়েছে। মাননীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল নিজের অপকর্ম,কালো টাকা ও অপরাজনীতি ঢাকতে জেলা আওয়ামীলীগকে পরিবারতন্ত্র বানিয়ে রেখেছেন। পরিবারের ১১ জনকে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য বানিয়ে রেখেছেন তিনি। ভাই -ভাতিজা,স্ত্রী-বোন -দুলাভাই এবং সজনসহ বিএনপি ও পাকিস্তান প্রিতিদের নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ কমিটি করেছেন। তাঁর গাড়িতে করেই বিএনপির সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়ায়। বিএনপির রাজত্বকালীন সময়ে আওয়ামীলীগ কর্মীদের ওপর যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছিল সে ব্যাপারে দির্ঘদিনেও কোন মামলা করেননি তিনি। অথচ যারা সেময় আওয়ামীলীগ কর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছির ,তারা এখন আওয়ামীলীগ নেতা হয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী পলক আরো বলেন, বিএনপির জেলা কমিটির নেতা এখন আওয়ামীলীগ নেতা ও তার ব্যবসায়ীক পার্টনার। সাংসদ শিমুলের অপকর্মের দালিলিক প্রমান রয়েছে। তিনি নিজে রাজাকার পুত্র সেই দালিলিক প্রমানও রয়েছে। তার পাশে রয়েছেন প্রতিষ্ঠিত রাজাকার ও শিবির কর্মী। বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সাথে তার সখ্যতারও প্রমান রয়েছে। এসব বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে তাকে জবাব দিতে হবে। তার সকল অপকর্ম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, গত ২৪ বছরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ পুর্নাঙ্গ কমিটি করাতে পারেননি তিনি। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রিয় সংসদ একটি সুন্দ ও শক্তিশালী কমিটি দেওয়ায় তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। এতে ষড়যন্ত্রের কি দেখলেন মাননীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল। প্রতিমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন,তিনি নৌকার বিরোধীতা করেননি কখনও। স্বাধীনতার ৩৬ বছর পর তিনি নৌকা নিয়ে সিংড়ায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নৌকা নিয়ে তিনি এখনও বিজয়ীর পতাকা উড়িয়ে চলেছেন বলে জানান। নোংরামি বা মিথ্যাচার করে কখনও প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়না।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments