Homeগুরুত্বপূর্ণনাটোরে কীর্তনীয়াদের জীবিকার একমাত্র পথ কীর্তন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন

নাটোরে কীর্তনীয়াদের জীবিকার একমাত্র পথ কীর্তন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন

নাটোরে কীর্তনীয়াদের জীবিকার একমাত্র পথ কীর্তন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন

নাটোর নিউজ: হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ১২ মাসে ১৩ পূঁজা-পার্বন অনুষ্ঠিত হয়। এইটা প্রবাদ বাক্য নয় বাস্তবে হিন্দু ধর্মের মধ্যে ১২ মাসেই পূঁজা অর্চণা, হরিবাসর, পদাবলী ও নাম কীর্ত্তন মাসের তিথী অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ২০১৯ সালের ৮ই মার্চ মহামারী করোনা ভাইরাস রোগের প্রার্দুভাব শুরু হয়,পর্যায় ক্রমে সেটা ২৬ শে মার্চে পর থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পরে। অবস্থায় নাটোরেও বন্ধ হয়েছে কীর্তন সহ সকল ধর্মীয় উপাসনা। আর কাজ বন্ধ হয়ে যায় নাটোর জেলার প্রায় দেড়শতাধিক কীর্তনীয়া কর্মহীনতা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দ্রুত তাদের সাঁতার হাত বাড়িয়ে দেবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা হিন্দু সমাজের।

নাটোর জেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক(সদস্য সচিব) দেবাশীষ কুমার সরকার জানায়, বাংলাদেশ সরকার জন প্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারী করে প্রতিটি উপজেলার থানা প্রশাসন কর্মকর্তার মাধ্যমে জন সমাগম ও এক সংগে জনগন রাস্তায় ঘোরা ফেরা করার উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে। যাতে করে বিভিন্ন এলাকায় কর্মজীবী লোকজন আক্রান্ত না হয়। ঠিক এই সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মাস ও তিথী অনুযায়ী ধর্মীয় পালা গান, নাম কীর্ত্তন, পদাবলী কীর্ত্তন সপ্তাহ ও মাসব্যাপী বিভিন্ন মন্দিরে কীর্ত্তনিয়া দল নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করতেন।সনাতন ধর্মের ভক্তবৃন্দ না থাকলে কীর্ত্তন গাওয়ার পরিপূর্নতা পায় না।

একটি কীর্ত্তন দলে একাধিক সদস্য থাকে, যেমন-খোল বাদক, কর্ত্তাল বাদক, বাঁশি ও হারমুনিয়াম বাদক সহ আরো অনেকে। কিন্তু কীর্ত্তন পরিচালনাকারীকে উল্লেখিত বাদ্যযন্ত্র বাদককে একই এলাকায় থেকে সংগঠিত করতে না পারলে বিভিন্ন এলাকা হতে নিয়ে একটি সুসংগঠিত কীর্ত্তন দল গঠন করতে হয়। কিন্তু যেহেতু এখন লোকসভা কম বন্ধ এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাই তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

নাটোর হিন্দু যুব মহাজোটের প্রতিষ্ঠাতা ও রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন কুমার সরকার জানান, আমাদের দূভার্গ্যরে বিষয় এই যে, যারা কীর্ত্তন গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা বর্তমানে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। প্রত্যক্ষভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকার কীর্ত্তনিয়া দলগুলোর সংগে কথা বলে জানতে পারি, তারা দীর্ঘ ১৯ মাস খুব কষ্টে নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন ও দলে অন্যান্য যারা আছেন তাদেরকেও বিভিন্ন উপায়ে কষ্ট করে হলেও দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তিনি জানান নাটোরের পাইকেরদোল ,হাজরা নাটোর, উত্তর পটুয়াপাড়া, নলডাঙ্গা উপজেলার সেনভাগ, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, নাজিরপুর, সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম, কালিগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে কীর্তনীয়া দল রয়েছে। যাদের পেশায় বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত মহানাম যজ্ঞ অনুষ্ঠানে কীর্তন পরিবেশন করা। সে কীর্তন করে যে পয়সা পান তাই দিয়েই তাদের সংসারের প্রধান আয় কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ।

হিন্দু মহাজোটের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী সুবাস চন্দ্র জানান, বর্তমানে শুরু হয়েছে তৃতীয় ধাপে ভয়ংকর মহামারী করোনা ভাইরাস।যার ঢেউ আর কতদিন চলবে সেটা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানেন না। যার কারণে কীর্ত্তন গাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার অনেকে কেউ অটোভ্যান চালাচ্ছেন দিনমজুরি খাটছেন তাও কাজ ঠিকমতো পাচ্ছেন না , খেয়ে না খেয়ে অর্ধপেটে কোনরকমে জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত তারা। একটু সরকারি সহায়তা পারে তাদেরকে সচ্ছল জীবনে হাসি ফোটাতে। নাটোরের লালপুরের ওয়ালিয়া এলাকায়, ধুপোইলে কীর্তনীয়া দল গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।

নাটোর হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট ভাস্কর বাগচী বলেন, সরকার জেলা প্রশাসন উপজেলা প্রশাসন ও এলাকার জন প্রতিনিধিদের কাছে জোর দাবী হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ দের কাছ থেকে সঠিক দল ও সেই সমস্ত কীর্তনীয়া দলের সদস্যদের তালিকা তৈরি করে তাদেরকে সরকারী ত্রান তহবিল হতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। পাশাপাশি কীর্ত্তনিয়া সম্প্রদায়কে বাঁচিয়ে রাখবেন বলে সকল সনাতন ধর্মের অনুসারী ভক্ত বৃন্দের দাবী ও আশাবাদ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments