“কাদের জন্য এই ছবি বানালেন সাদ?”- এম আসলাম লিটন
আব্দুল্লাহ মোহম্মদ সাদ পরিচালিত বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে মনোনিত হয়েছে। গত পরশু তার প্রদর্শনীও হয়েছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এটাই প্রথম। যা আমাদের জন্য এনে দিয়েছে বিরল সম্মান।
ছবিটি কেমন? কী তার গল্প? কী তার প্রেক্ষাপট? কী আছে ছবিতে? কোন বৈশিষ্টের কারণে ছবিটি এই সম্মান পেল? নির্মাতা, অভিনয় শিল্পী, কলাকুশলীরা কতটা শিল্প দক্ষতার ছাপ রাখতে পারল? নির্মাণ শৈলি কতটা পরিপূর্ণ? আহা! ছবিটা কবে, কোথায়, কিভাবে দেখার সুযোগ হবে? কবে ছবিটির শিল্পরস উপভোগ করা যাবে? এসব নিয়ে তেমন কোন আকুলতা দেখছিনা। কোন উৎসাহ গুঞ্জন শুনছিনা। নেই কোন ট্রল। বরং ছবির পোস্টার বা দৃশ্যচিত্রের চাইতে নায়িকার ব্যক্তিগত ফটোশেসনের ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যম জুড়ে।
চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট, অর্জন সব বিষয় ছাপিয়ে আমাদের দেশের মানুষের মনে স্থান পেয়েছে ছবির নায়িকা আজমেরী খান বাধনের পোশাক, গেট-আপ, শাড়ি-গহনা। নারী বা পুরুষ কেউই এই দেউলিপয়ানায় কম যাচ্ছেন না। সমানে সমান। পুরুষের মনোজগতে বাসা বেঁধেছে নায়িকার শরীর (সবাই নয়)। এরকম অর্ধ-নগ্ন পোশাক পরার মানে কী? এরকম পোজে ছবি তোলা কেন (মনে মনে লোভনীয় কল্পনা ও জুম করে ছবি দেখা) ?
আর নারীর মগজে কিলবিল করছে তার শাড়ি, গহনা, ব্লাউজ। এই জামদানি কোন প্রতিষ্ঠানের তৈরি? কত দাম? রঙ ম্যাড়মেড়ে কেন? আরেকটু উজ্জ্বল হলে ভাল হত! গহনা গুলো কিসের? যে ব্লাউজ পরেছে তা বাংলাদেশে পরলে (নিজে পরার বাসনার কল্পনা) ক্যারি করা যাবে কি না? কোথায় পাওয়া যাবে এই শাড়ি-গহনা? চিন্তায় চিন্তায় ভারাক্রান্ত নারী সমাজ (সবাই নয়)।
এই সুযোগে লোভনীয় অফার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। এই তো মোক্ষম সুযোগ। আজমেরী খান বাঁধনকেই এখন বেচতে হবে। চড়া দামে। লোভনীয় লাভে। অজস্র ধান্দাবাজ ফ্যাসন হাউজ একই ধরণের সামগ্রী নিয়ে ঢুকে পড়েছে নারীদের মগজে। বাংলার নারীরাও কম কিসে? হুমড়ে পড়ছে অনলাইন পেজগুলোতে। জানা গেছে, বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নাকি এখন অর্ডার নিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
চলচ্চিত্রের চেয়ে চলচ্চিত্রের নায়িকা ও তার ব্যক্তিগত পোশাক যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখন আমাদের চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন।। চলচ্চিত্রের শিল্পিক বৈশিষ্টের চেয়ে নায়িকার দেহ এবং পোশাক যখন আকাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন এ দেশের মানুষের বিপন্ন মানসিকতার চলচ্চিত্র ফুটে ওঠে। তাই প্যারিসে কোন এক উৎসবে এক নারীর পরিধেয় পোশাক অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে আমাদের মানসিক দেউলিয়াপনাকেই সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে বারবার।
যদি কখনো, আব্দুল্লাহ মোহম্মদ সাদের সাথে দেখা হয়, তাহলে একটাই প্রশ্ন করব- কেন এই চলচ্চিত্র আপনি বানালেন? কাদের জন্য বানালেন? যৌন বিকারগ্রস্ত পুরুষদের জন্য? “রেহান মিরয়ম নূর” কি এই গল্প বলে? “রেহানা মরিয়ম নূর’ কি পুরুষদের চরিত্র উন্মোচন করতে পেরেছে? পুরুষদের বিকৃত কামুক চরিত্র? নারীকে কেবল ভোগ্যবস্তু ভাবার চরিত্র? নারীদের এ-কোন লড়াই শেখাচ্ছে নূর? মর্যাদা আদায়ের না নাকি নিজেকে রমনীয় কমনীয় করে তোলার লড়াই? আপনার ছবি কি নিজেকে আকর্ষনীয়, রমণীয়, কমনীয়, পুতুলপণ্য বানিয়ে রাখায় নিমজ্জিত নারীদের জন্য বানানো? নাকি সুযোগ সন্ধানী মুনাফা লোভী পণ্য-ব্যবসায়ীদের জন্য? কাদের জন্য বানালেন সাদ এমন ছবি? এই ছবি কানে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারে ভূষিত হলেই বা আমাদের কি লাভ? আমাদের চলচ্চিত্রের কী লাভ?
* আমার এই লেখা কোন পুরুষ বা নারীকে ছোট করে দেখানোর জন্য নয়। বরং আমাদের সামগ্রীক মানসিক সংকটের চলচ্চিত্র মাত্র।