আমার দেশের নতুন রূপকথা
জাহিদ হাসান
এমন এক দেশ ছিলো যেখানে দরজার বাইরে তো বটেই দরজার ভিতরেও ওঁত পেতে থাকতো খাদক। মায়েরা ছিলো ভীত আর সন্ত্রস্ত। কন্যা জন্ম দেওয়ার কারনে সর্বক্ষণ চিন্তিত। বুকের ধনকে কোলছাড়া করতে চায়তো না। কারণ তাঁরা জানতো কোল থেকে নামলেই লাশ। পুতুলের মতো লাশ। লাশের ঠোঁটে গালে কামড়ের দাগ। সারাক্ষণের উদবেগ ছিলো প্রতি ঘরের অনিবার্য উপাদান।
তো মায়েরা কী করতো তখন? কন্যাদেরকে পাহারা দিতো। সাথে করে স্কুলে নিতো, সাথে করে আনতো, কারো সাথে খেলতে দিতো না, পাশের বাড়ি বেড়াতে যেতে দিতো না, বিকেলে একা ছাদে যেতে দিত না। এমনকি পুরুষ কোন আত্মীয়ের কাছেও ছেড়ে দিতে সাহস পেতো না। অবস্থা এমন ছিলো যে, বাবা-ভাইকেও পুরুষ বলে চিনতে শিখছিলো বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা।
ফলে সেই দেশের সেই সময়ের একটা পুরো প্রজন্ম তাঁদের বয়সোচিত স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেললো। বাচ্চারা নিজেরা যেমন সবাইকে ভয় পেতে শুরু করলো তেমনি এটাও ভাবতে শুরু করলো যে, তাঁদের জন্যেই সবার মনে অশান্তি। সে এবং তাঁর শরীরই সব নষ্টের গোড়া। যে বয়সে এই দুনিয়ার ঘাসের ডগা থেকে পাখি জোনাকী রঙ্ধনু এবং সবার উপরে মানুষ সহ সকল প্রাণির প্রতি তাঁর মনে অসীম মমতা জেগে ওঠার কথা সেই বয়সে সে কেবল আর সবাইকে তো বটেই, নিজেকেও নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করলো। তাঁরা সবাই সন্দেহবাদী আর আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠলো। এক অদ্ভুত অপরাধবোধের কারণে বিষন্নতা হয়ে দাঁড়ালো তাঁদের একমাত্র খেলার সাথী।
ডিপলি রুটেড ট্রমা ও আর খন্ডিত ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেড়ে ওঠা সেই প্রজন্মই বছর বিশেক পরে সেই দেশটার নেতৃত্ব দিতে শুরু করলো। তাঁদের কেউ হলো নেতা, কেউ সচিব, কেউ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, কেউ ভার্সিটির শিক্ষক, আর কেউ বুদ্ধিজীবী।
তারপর? তারপর আর কি! জীবন থেমে যায়, দেশ চলতে থাকে।