কিছু মানুষের জ্বীন, ভূত কিংবা প্রেত দর্শনের বাস্তবতা
-হোরাস আহমেদ
নিউরো সার্জন ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড মৃগী রোগীদের মস্তিষ্কে শৈল্য চিকিৎসা করতে শুরু করেন। তিনি আবিষ্কার করেন মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের কিছু নির্দিষ্ট অংশকে ইলেক্ট্রোডের সাহায্যে উত্তেজিত করলে রুগীরা বিভিন্ন রকম ভৌতিক কিংবা অশরীরি অবয়বের উপস্হিতি টের পায়। মস্তিষ্কের বেশ কয়েকটি অস্বভাবিকতাকে সাধারণ অর্থে বোঝানোর জন্য এপিলেপ্সী বা মৃগীরোগ পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কম্পিউটারের মত আমাদের মস্তিষ্কও হলো একটি জটিল সিস্টেম যা কিনা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮০টির মত তড়িৎ স্পন্দন দ্বারা চালিত হয়।
এই সমস্ত স্পন্দনগুলি বিভিন্ন স্নায়ুকোষের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কে চিন্তা-চেতনা, অনুভব, কিংবা স্মৃতির উদ্ভব ঘটায়। এপিলেপ্টিক আক্রমণ তখনই হয় যখন খুব কম সময়ের জন্য মস্তিষ্কে কোন একটি অস্বাভাবিকতার কারণে তড়িৎ স্পন্দনগুলি সেকেন্ডে প্রায় ৫০০ বারের মত প্রবাহিত হতে থাকে। এই স্বল্প সময়ের জন্য মস্তিষ্কে তড়িৎ শক্তির হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়াটা একটি ছোট্ট অংশে হতে পারে অথবা পুরো মস্তিষ্ক জুড়েই হতে পারে। মস্তিষ্কের যে অংশে এই বৃদ্ধি ঘটে তার উপর নির্ভর করে নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো ঘটতে পারে।
১) আক্রান্ত মানুষটির সংবেদনশীলতা বা অনুভূতি এবং সচেতন অবস্হার পরিবর্তন সাধিত হতে পারে।
২) পুরো শরীর কিংবা শরীরের নির্দিষ্ট কোন অংগের অনিয়ন্ত্রিত সঞ্চালন শুরু হতে পারে, যেমন হাত-পায়ের খিচুনি।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন মৃগীরোগের কারণ মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ আক্রান্ত হলে রোগীরা অতিপ্রাকৃতিক শক্তি, যেমন ভূত, প্রেত, জ্বীন, অপদেবতা ইত্যাদির উপস্থিতি টের পায় এবং ধারণা করে তাদের আশে পাশের সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনাও সেই সব আত্মারা নিয়ন্ত্রণ করছে। মানুষের মস্তিষ্ককে ঠিক মাঝ বরাবর দুটি ভাগে ভাগ করে বিজ্ঞানীরা তাদের নাম দিয়েছেন বাম গোলার্ধ (Left hemisphere) এবং ডান গোলার্ধ (Right hemisphere)। দুটি গোলার্ধই মানুষের কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারের জন্য দায়ী থাকে। আর গোলার্ধ দুটি নিজেদের মধ্য যোগাযোগ রক্ষা করে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন স্নায়ু তন্তুর সমন্ময়ে তৈরী পুরু একটি ব্যান্ডের সাহায্যে। এই ব্যান্ডটিকে বলা হয় কর্পাস কলোসাম (corpus callosum)।
নিউরো সাইন্টিস্টরা বলে থাকেন বাম টেম্পোরাল লোবের একটি নির্দিষ্ট অংশ যদি আক্রান্ত হয় তাহলে এই লোব খুব সহজেই বিভ্রান্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডান গোলার্ধের যেকোন কর্মকান্ড রুগীর মস্তিষ্ক অন্য আরেকজনের বলে ভাবতে পারে। এই আঘাতের ফলে এমন একটা ধারণা হতে পারে যে ঘরের ভিতরেই ভৌতিক কোন আত্মা আছে। এর কারণ হলো মস্তিষ্কের কোন ধারনাই নেই যে এই উপস্থিতিটা আসলে তার নিজেরই অন্য অংশটি। সেক্ষেত্রে নিজস্ব বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে রোগীটি হয়ত ভাবতে পারে এই ‘অন্য ব্যক্তিটি’ হয়ত কোন অপদেবতা অথবা আলৌকিক কোন স্বত্বা যেমন ফেরেশতা, এমনকি সেটা ইশ্বরও হতে পারে।
উপরোক্ত বৈজ্ঞানিক ধারণাগুলোর উপর ভিত্তি করে কানেডিয়ান নিউরোসাইন্টিস্ট মাইকেল পারসিঙ্গার বৈদ্যুতিক তার সংযুক্ত একটি বিশেষ ধরণের হেলমেট তৈরী করেন যা মস্তিষ্কের বিশেষ অংশকে অনিয়মিতভাবে ওঠানামা করা চৌম্বকীয় তরঙ্গ দ্বারা উত্তেজিত করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোন চিন্তা বা আবেগের, যেমন ধর্মীয় অনুভূতির, উদ্ভব ঘটাতে সক্ষম। এই হেলমেটের নাম হলো ‘The God Helmet’। The God Helmet আসলে গবেষনাগারে ব্যবহৃত “Koren Helmet” এর বহুল প্রচলিত জনপ্রিয় নাম। লরেন্টিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসাইন্স ডিপার্টমেন্টের স্ট্যানলি কোরেন একই ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর ডঃ এম. এ. পারসিঙ্গারের নির্দেশনা অনুযায়ী এই হেলমেট তৈরী করেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন এমনভাবে যাকে শুধু আধ্যাতিক অভিজ্ঞতা হিসাবেই আখ্যা করা যায়। ডঃ পারসিঙ্গারের রির্পোট অনুযায়ি অংশগ্রহনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০% এর মত লোকই ঘরের মধ্যে তাদের নিজেদের উপস্হিতি ছাড়াও অন্য আরেকজনের উপস্হিতি টের পেয়েছেন বলে জানান। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্বয়ং ইশ্বরের উপস্থিতি টের পেয়েছেন বলে ডঃ পারসিঙ্গারকে জানান।
সূত্রঃ
১) Physics of the impossible – Michio Kaku
২) অন্তর্জাল
৩) গুগুল ইমেজ আর্কাইভ
-হোরাস আহমেদ
বেনুবর্ণ অধিকারীর ফেসবুক ওয়াল থেকে নেওয়া