শাটডাউন- ডন শিকদারের অনুগল্প”
শাটডাউন ডন শিকদার ভোরের অনেক আগে থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দে পঞ্চাশোর্ধ জয়গুনের ঘুম ভাঙে না, ঘুম ভাঙে চালের ফুটো দিয়ে পড়া জলে। ফোঁটা ফোঁটা জল একদম তার কপালে এসে ঠাসঠাস করে বাড়ি মারছে। জয়গুন বিছানা ছেড়ে উঠে পানি পড়া জায়গায় একটা গামলা দিয়ে দিল। অন্যান্য দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে এলাকার আশপাশ থেকে কচুঘেচু তুলে বাজারে বসে, কখনো কেউ ছোটখাট কাজ করিয়ে পাঁচ-দশ টাকা দেয়, এভাবেই তার দিন চলে।
সোয়ামী ট্রাক চালাতো। একবার মানিকগঞ্জ মাল দিতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক পড়ে জেনেছে কোন এক ঘাটে পিরিতের টানে আটকা পড়েছে। জয়গুন মাঝেমধ্যে ভাবে, তার সোয়ামী চালাত ট্রাক অথচ আটকা পড়লো নদীর ঘাটে, এডাই বুঝি লিলে! বৃষ্টি একবার বাড়ছে একবার কমছে, জয়গুনের চিন্তা বেড়েই চলেছে। আজ নাকি শাটডাউন। দেশে রোগ আসার পর এতদিনেও লকডাউন কি সেটা ঠিকমত বুঝতে পারেনি, এখন আবার শাটডাউন।
এইটা বুঝতে আবার কয়দিন লাগবে কে জানে? তবে লোজকন বলাবলি করছিল, আর্মি লামবি, বাইড়াই পাছার ছাল তুলি দিবি। আমরাও কম লা, এর মদ্দিই কাম সারি লিবো, খাওয়াতো লাগবি নাকি। জয়গুনেরও খালি একটাই চিন্তা, পেটের চিন্তা। সে হাড়ির মধ্যে কিছু চাল খুঁজে পেল।এটা দিয়ে একবেলাও হবে না। গতকাল এলাকার এক লাতি বসে বসে মোবাইল টিপছিল, জয়গুনকে দেখে বলেছিল – ও দাদী কি খবর? – যা দেখিচ্চু তাই রে বা। তা কাল থাকি নাকি শাটডাউন, বাড়িত থেকে বাড়ালি আর্মি মারবি? লাতি বললো, হ মারবিই তো, এক কাজ করো ৩৩৩ নাম্বারে কল করলে চাল ডাল দিয়ে যাবিনি।
তাইলে আর বাইর হওয়া লাগবি না। জয়গুনের হঠাৎ লাতির কথাটা মনে পড়ে গেল। কিন্তু তারতো মোবাইল নাই, সে কিভাবে সাহায্য চাইবে। এদিকে পেটে ক্ষুধাও বাড়ছে। জয়গুন ভেবে ফেলে, আর্মি মারে মারুক সে মাদ্রাসা মোড়ে গিয়ে দাড়ায় থাকবে। যদি কেউ সাহায্য করে এই আশায় জয়গুন মাদ্রাসা মোড়ে দাড়িয়ে আছে। টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। সে তার ছেড়া আঁচল দিয়ে বৃষ্টি আটকানোর চেষ্টা করে। ফুটো চালার মত ছেড়া আঁচলের ফুটো দিয়েও বৃষ্টির ফোঁটা জয়গুনের কপালে ঠাসঠাস করে বাড়ি মারতে থাকে…