লকডাউন গৌতম ও আমি – আবরার শাঈর
বগুড়ার ছেলে গৌতম তখন ৩য় কি ৪র্থ বর্ষে উঠলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলে নিচতলায় ২৭০ বর্গফুটের ১২৪ নম্বর ঘরটাতে পূর্বের দেয়াল ঘেঁষে তার বিছানা ও টেবিল ছিলো। গভীর রাত করে পড়াশোনা শেষে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তো বুঝতে পারতাম না। সকালে হঠাৎ ধড়ফড় করে গায়ের কাঁথা সরিয়ে লাফ দিয়ে উঠতো, বিড় বিড় করে বলতে থাকতো, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সময়গুলো নষ্ট করে ফেললাম। দ্রুত গোসল সেরে প্রার্থণা করে আবারও পড়তে বসতো টেবিলে। তার কথা ছিলো খাবার সময়, ঘুমানোর সময় এসব অপচয়। সময়কে কাজে লাগাতে হবে, নষ্ট করলে তার মাশুল দিতে হবে।
ফলিত গনিত বিভাগের সেরা শিক্ষার্থী হয়ে শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখতো গৌতম। সময়কে কাজে লাগাতে পারলেও সৌভাগ্যকে কাজে লাগাতে পারেনি সে। যদ্দুর জেনেছি এখন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায় সে। ১১ বছর পেরিয়ে আজ আবারও হঠাৎ গৌতমের কথা মনে পড়ে গেলো! এই মহামারী মহামারী করে শিক্ষার্থীদের যে সময় নষ্ট হলো, এমন সময় গৌতম শিক্ষার্থী থাকলে নির্ঘাত হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতো নয়তো মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পাগল হতো।
সময়গুলো আমরা নষ্ট করে ফেলছি কি করে! বছরের পর বছর কাজ কম্ম ফেলে ঘরে শুয়ে বসে শিক্ষার্থী, সরকারি বেসরকারি চাকুরে সকলের মেধার বারোটা বেজে চলেছে। কারো কারো জীবনের সময়ই থেমে যাচ্ছে আজীবন। এই লকডাউন, করোনা, স্বাস্থ্যবিধি শব্দ গুলো শুনতে শুনতে মানুষ এখন রীতিমত বিরক্ত হয়ে পড়েছে। কিছুই কি করবার নেই কারো হাতে? সময় এতো সস্তায় নষ্ট করে ফেলবো আমরা? জানিনা আরও কতো বছর এমন সময় নষ্টের দিন গুনতে হবে। সময়গুলো বড্ড অসময়ে হেলায় হেলায় গেলো…